বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আর্টিকেল নাইনটিনের ধারাবাহিক সংলাপ শুরু

প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর ২০২২

বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কর্মকৌশল প্রণয়নের জন্য আর্টিকেল নাইনটিনের ধারাবাহিক সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা জাতিসংঘের নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা রিজল্যুশন (জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রেজিলিউসন ১৩২৫) অনুযায়ী সরকারকে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানান।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন কর্তৃক নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কর্মকৌশল প্রণয়নের জন্য আয়োজিত ধারাবাহিক সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই কথাগুলো উঠে এসেছে। গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা এর আর্থিক সহযোগিতায়, “ইকুয়ালি সেফ: টুওয়ার্ডস এ ফেমিনিস্ট এজেন্ডা টু দ্য সেফটি অব জার্নালিস্ট (FEMSOJ)” শীর্ষক দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশে পরিচালিত একটি প্রকল্পের অধীনে আজ ((বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০২২ ) কানাডিয়ান ক্লাব, ঢাকায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকলস। এই অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু এবং উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ এর সমন্বয়কারী আঙ্গুর নাহার মন্টি। এই ধারাবাহিক সংলাপের উদ্দেশ্য ও কর্মকৌশল এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন আর্টিকেল নাইনটিন এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার রুমকী ফারহানা ।

বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকলস অনুষ্ঠানে বলেন, “একটি দেশে গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে গণমাধ্যম। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে গণমাধ্যম একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অধিকন্তু, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের জন্য সাংঘাতিক ঝুঁকি তৈরি করেছে“।

সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, “ বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমালোচনা, এবং ভিন্নমতকে বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইনের অপব্যবহার এর মাধ্যমে দমন করা হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর আরোপিত যে কোন বিধিনিষেধ শুধুমাত্র আইন দ্বারা, যুক্তিসঙ্গত এবং আনুপাতিক হওয়া উচিত। নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি মিডিয়া হাউসে জেন্ডার নীতি, যৌন হয়রানি নীতি এবং আচরণবিধি থাকা উচিত। নতুন খসড়া ডাটা সুরক্ষা আইন, ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রন আইন এবং ওটিপি প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রন আইন প্রবিধানগুলি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং জেন্ডার লেন্সের অধীনে পর্যালোচনা করা উচিত এবং সেই অনুযায়ী সংশোধন করা উচিত।”

সভাপতির বক্তব্যে ফারুখ ফয়সল বলেন, “বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, বিশেষ করে নারী সাংবাদিকরা বিভিন্ন দিক থেকে হুমকির মুখে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মানবাধিকার সূচকে পাকিস্তান বাংলাদেশের থেকে পিছিয়ে থাকলেও সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য দেশটিতে দুই প্রদেশে ‘প্রোটেকশন অব জার্নালিস্ট অ্যান্ড মিডিয়া প্রফেশনালস অ্যাক্ট, ২০২১’ আইন রয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক যে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আমাদের দেশে কোনো আইন নেই।“

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সিনিয়র সাংবাদিক, সম্পাদক, এনজিও প্রতিনিধি, কূটনৈতিক, শিক্ষক ও গবেষকেরা কর্মক্ষেত্রে ও কর্মক্ষেত্রের বাইরে নারী সাংবাদিকদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাধা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

তারা বলেন, বাংলাদেশে হত্যা, গুম, আইনি হয়রানি, হয়রানি, অপরাধের দায়মুক্তি এবং হুমকিসহ বিভিন্ন কারণে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। নির্বাচনের সময় এবং কোভিড ১৯-এর মতো মহামারীতে সাংবাদিকদের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রে, নারী সাংবাদিকরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে এবং কর্মস্থলের বাইরে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। কারণ যে কোন ধরণের সহিংসতা ও সঙ্কট সহজাতভাবে সমাজের অনগ্রসর ও কম ক্ষমতাপ্রাপ্ত অংশকে বেশি প্রভাবিত করে।

আপনার মতামত লিখুন :