কিশোরগঞ্জে অটোরিকশা চালক হত্যার মূল আসামীসহ দুই সহযোগী গ্রেফতার


প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০২২

কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচরে গলা কেটে অটোরিকশা চালক হত্যার চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস মামলার মূল আসামীসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

র‌্যাব-৩ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামী গ্রেফতার করে। যার মধ্যে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর ০৩ টি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামী মোঃ হেলাল হোসেনকে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকা থেকে গ্রেফতার, রাজধানীর শাহজাহানপুরের জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং পথচারী কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকান্ডের অন্যতম ০৪ জন আসামীদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার, বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ কামরুল হাসানকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতার এবং পূর্ব শত্রæতার জেরে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১১ বছরের পলাতক আসামি মোঃ জিকুকে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে গ্রেফতার। এছাড়াও র‌্যাব-৩ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কিছু দুর্ধর্ষ খুনী, ডাকাত, চরমপন্থী এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখ গভীর রাতে রাজধানীর চকবাজার এলাকা হতে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর এলাকায় এক যুবককে গলাকেটে হত্যা মামলার আসামী ১। মোঃ নিলয় মিয়া (২০), পিতা-মোঃ নবী মিয়া, সাং-শিবপুর, থানা-ভৈরব, জেলা-কিশোরগঞ্জ, ২। মোঃ ইব্রাহিম মিয়া @ বাদল (১৯), পিতা-মোঃ সিরাজ মিয়া, সাং-চন্ডিবের, থানা-ভৈরব, জেলা-কিশোরগঞ্জ এবং ৩। মোঃ হৃদয় মিয়া (২৩), পিতা-মৃত আসাদ মিয়া, সাং-শ্রীমতিচর, থানা-ভৈরব, জেলা-কিশোরগঞ্জদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ভিকটিম শরীফ মিয়া (২৮) কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার পৌরশহরের চন্ডিবের মহল্লার মুক্তার মিয়ার ছেলে। সে পেশায় একজন মিশুক গাড়ি (বিভাটেক) চালক। সে প্রতিদিনের ন্যায় ১৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখ বিকাল ১৫০০ ঘটিকার সময় তার মিশুক গাড়িটি নিয়ে ভাড়ায় চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু উক্ত দিন সে আর বাড়ি না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তার পরিবারের সদস্যরা লোকমুখে জানতে পারে যে, কুলিয়ারচর থানাধীন ছয়সূতী ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের শান্তিপুর বাঘমারার বন্দ নামক স্থানে এক অজ্ঞাত যুবকের গলাকাটা লাশ পাওয়া গেছে। উক্ত সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে লাশটি কুলিয়ারচর থানা পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। পরবর্তীতে তারা হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহটি নিখোঁজ শরীফ মিয়ার লাশ বলে সনাক্ত করে। এ প্রেক্ষিতে ভিকটিম শরীফ মিয়ার ভাই মোঃ শিপন মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

ধৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম শরীফের স্ত্রীর সাথে গ্রেফতারকৃত আসামী নিলয়ের দীর্ঘদিনের প্রেমের সর্ম্পক ছিল। পরবর্তীতে শরীফের সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় নিলয় এবং তার প্রেমিকার মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। ফলসূতিতে ভিকটিম শরীফের প্রতি ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে গ্রেফতারকৃত আসামী নিলয়, হৃদয় এবং বাদল মিলে তাকে খুন করার নীলনকশা সাজায়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তারা একটি মাজারে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিম শরীফের মিশুক গাড়িটি ভাড়া করে একত্রে যাত্রা শুরু করে। তারা ভিকটিম শরীফকে মাটিকাটা গ্রামের শান্তিপুর বাঘমারার বন্দ নামক স্থানে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে গ্রেফতারকৃত আসামীরা ভিকটিমকে তার মিশুক গাড়িটি তাদেরকে দিয়ে দিতে বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বললে ভিকটিম শরীফ অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ভিকটিম শরীফকে তারা বেধড়ক মারপিট করে। মারামারির একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত হৃদয় এবং নিলয় ধারালো ছুরি দিয়ে ভিকটিম শরীফকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে এবং গ্রেফতারকৃত বাদল ভিকটিমের বুকের উপর চড়ে বসে ধারালো ছুরি দিয়ে ভিকটিম শরীফকে জবাই করে। ভিকটিম শরীফের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তার ব্যবহৃত মোবাইলফোন এবং মিশুক গাড়িটি নিয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। মোবাইলফোনটি তাদের জনৈক বন্ধু মুরছালিনের নিকট বিক্রয় করে এবং মিশুক গাড়িটি  বাঁশগাড়ি এলাকায় বাদলের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে তিনজন একযোগে ভৈরব হতে বাসযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের জীবন বৃত্তান্ত ঃ ধৃত বাদল ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। ২০১২ হতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাদল তার দুলাভাইয়ের সাথে ঢাকায় এসে একটি জুতার কারখানায় কাজ করে। সেখান থেকে মারামারি করে সে নিজ এলাকায় ফিরে যায় এবং বর্তমানে সেখানে জুতার কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। গ্রেফতারকৃত অপর আসামী হৃদয় মূর্খ। সে কখনো স্কুলে যায়নি। ছোটবেলা থেকে সে রাজধানীর লালবাগ এলাকায় একটি জুতার ফ্যাক্টরীতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। গ্রেফতারকৃত নিলয় একটি মাদ্রাসা হতে নুরানী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ২০১৫ সালে তার বাবার সাথে ঢাকায় এসে লালবাগে একটি জুতার ফ্যাক্টরীতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নিলয় এবং হৃদয় বেশ কিছুদিন যাবৎ এলাকায় গিয়ে অবস্থান করে এবং বাদলকে সাথে নিয়ে তাদের হত্যাকান্ডের নীলনকশা চুড়ান্ত করে। ঘটনার পর তিনজনই ঢাকার উদ্দেশ্যে পালিয়ে আসে এবং লালবাগে তাদের প্রাক্তন কর্মস্থল জুতার ফ্যাক্টরীতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এভাবেই তারা ঘটনার পর থেকে লালবাগ এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আপনার মতামত লিখুন :

এই বিভাগের সর্বশেষ