রওশন এরশাদকে কারাগারে ডিভিশন দেননি খালেদা: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর ২০২২

সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের বক্তব্যে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সাজেদা চৌধুরী ও মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে জিয়া কারাগারে ডিভিশন না দিয়ে ফেলে রেখেছিলেন। খালেদা জিয়াও ঠিক একই কাজ করেছিলেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে গ্রেপ্তার করে।

গতকাল রোববার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনা হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর সাজেদা চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংসদের বৈঠক আজ বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর আগে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, মুহম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, আ স ম ফিরোজ, শ ম রেজাউল করিম, ওয়াসিকা আয়শা খান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদ উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মসিউর রহমান রাঙ্গা।

শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রওশন এরশাদ মাস্টার্স ডিগ্রি পাস। জেল কোডে আছে, মাস্টার্স ডিগ্রি পাস হলেই তাঁকে ডিভিশন দিতে হয়। খালেদা জিয়া কিন্তু তাঁকে ডিভিশন দেননি। এরশাদকেও না। সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে তাঁকে ফেলে রেখেছিলেন। একদম সাধারণ কয়েদির সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি না জাতীয় পার্টি সেই নির্যাতনের কথা ভুলেই গেছে এখন। ভুলে গেছে অনেকেই সেটা। আওয়ামী লীগ তো সবার হাতে নির্যাতিত। জিয়াউর রহমান, তার পর খালেদা জিয়া, তার পর জেনারেল এরশাদ। দফায় দফায় গ্রেপ্তার, দফায় দফায় এগুলো তো অনবরত আমরা ভুক্তভোগী।

সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ নিবেদিত প্রাণ কর্মী হারিয়েছে জানিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর প্রতিটি কাজের সঙ্গে সাজেদা চৌধুরী ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। চলার পথে সবসময় তাঁকে পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে একে সবাই চলে যাচ্ছে। বয়স হয়ে গেছে, যেতেই হবে। হয়তো আমিও এক দিন ঠিক যাব। তবে, যে যেটা করেছে, সেটা আমাদের স্মরণ করতেই হবে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু আমরা কেন? এখানে বিরোধী দলের যেসব নেতাকর্মী আছেন, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ যাঁরাই আছেন, তাঁরাই কিন্তু কম নির্যাতনের শিকার হননি।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর সাজেদা চৌধুরীকে যখন জিয়াউর রহমান গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে যান তখন তিনি অপারেশনের রোগী ছিলেন। তার পেটে ব্যান্ডেজ ছিল। ঘা ভালো করে শুকায়নি। বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের উদ্যোগ নেন জিয়াউর রহমান। তাঁর শর্ত ছিল কারও নাম ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু সাজেদা চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর নাম দেওয়ার জন অটল ছিলেন। এ নিয়ে তিনি দলের ভেতরে থেকেও যথেষ্ট প্রতিবাদ করেছেন। এ জন্য তাঁকে কারও কারও রুদ্ররোষেও পড়তে হয়েছে। সেসময় তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।

খালেদা জিয়া অসুস্থ হওয়ায় নির্বাহী আদেশে সাজাপ্রাপ্তি স্থগিত রেখে বাসায় থাকার সুযোগ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বয়োবৃদ্ধ মানুষ হওয়ায় মানবিক দিক বিবেচনা করে এটা করা হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া সেটা করেননি। এমনকি সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান জামালউদ্দিন সাহেবকে প্রেপ্তার করে, তাঁর নামে ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে, কোনো ডিভিশন না দিয়ে, মাত্র দুটি কম্বল দিয়ে জেলখানায় ফেলে রেখেছিলেন। এভাবে মানুষকে তাঁরা অত্যাচার করেছেন। এভাবে মানুষকে নির্যাতন করেছেন।

শোক প্রস্তাবের আলোচনায় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জন্য ব্রিটেনের রানী প্রয়াত দ্বিতীয় এলিজাবেথের আলাদা আন্তরিকতা ছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক দিন তিনি আমাকে বাকিংহাম প্যালেসের বারান্দায় নিয়ে গেলেন। পুরো দেখালেন। বললেন, দেখ কী আশ্চার্য সবাই এ রকম বোতলগুলো ফেলে। সাগরেরও এখন পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটার কিছু একটা করা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। কমনওয়েলথের মানুষের ভালোমন্দ নিয়ে চিন্তা করতেন।’
এদিকে চলতি সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপি শেখ এ?্যানি রহমানের মৃত্যুতেও শোক জানিয়েছে সংসদ। এ ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ অধ্যাপিকা খালেদা খানম, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবুল হাসনাত ও শাহানারা বেগম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশ্নেষণ অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান, ভাষাসংগ্রামী, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক রণেশ মৈত্র, দৈনিক বাংলার সম্পাদক বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খান, কিংবদন্তি গীতিকার ও চিত্রপরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায়, একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান অভিনেতা ও নাট্যনির্মাতা মাসুম আজিজ এবং কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপির মাতা জাকিয়া বেগম খানের মৃত্যুতে মহান সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।

অন্যদিকে সাম্প্র্রতিক ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে হতাহত, পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় হতাহত এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে সংসদ শোক প্রকাশ করেছে।

আপনার মতামত লিখুন :