বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর ৫৩ শতাংশ কাজ শেষ : ১১টি স্প্যান দৃশ্যমান

প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারি ২০২৩

বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ৫৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার অদূরে যমুনা নদীর বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু এখন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এই নির্মানযজ্ঞ রেল সেতুতে মোট ৫০টি পিলারের উপর বসানো হবে ৪৯টি স্প্যান।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে যানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে সেতু নির্মিত হচ্ছে যমুনা নদীর বুকে। ইতোমধ্যে ৩৫ নম্বর থেকে ৫০ নম্বর পিলারের কাজ শেষ করেছে প্রকৌশলীরা। সহস্রাধিক দেশি বিদেশী প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের তত্বাবধানে চলছে রেলসেতুর এ কর্মযজ্ঞ।

সেতুটির পূর্বপ্রান্তে পিলারের উপর ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুতে ভিয়েতনাম থেকে তৈরিকৃত ১০টি স্প্যান বসিয়ে রেলসেতু দৃশ্যমানও করেছে তারা। ১১তম স্প্যান বসানোর কাজও চলমান।

বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায় রেল সেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জায়কা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। অতিদ্রুত কাজ চলছে। স্প্যানের উপর যে রেলটা বসবে তা মূলত জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এখানে কোন স্লিপার নেই। এই রেলপথ নিয়ে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর বিভিন্ন পর্যায়ের নির্মাণকর্মী ও কর্মকর্তারা জানান, দেশের বৃহৎ মেগা প্রকল্পে যুক্ত হতে পেরে খুশী তারা। কাজের ব্যাপারে তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে খুবই সচেতন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত সেতুর কাজের অগ্রগতি ৫৩ শতাংশ। কাজের গতি অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালের শেষের দিকে রেলওয়ে সেতুটি উদ্বোধন করা সম্ভব।

তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাইকা। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অংশে নদীর দুইপাড়ে দুইটি প্যাকেজে দেশি-বিদেশি কর্মী-প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু খুলে দেয়া হলে মানুষের সহজ যাতায়াত যেমন নিশ্চিত হবে তেমনি খুলবে উত্তর জনপদের ব্যবসা বানিজ্যসহ সম্ভাবনার নানা দ্বার।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়। তবে ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তর লেনে প্রথম ফাটল দেখা দেয়। পরে ফাটলটি দক্ষিন লেনেও ছড়িয়ে পড়ে। এর থেকে সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকৃত ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে দেয়া হয়।

বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়, বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।

আপনার মতামত লিখুন :