“শিক্ষাই হলো জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম”– মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন


প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে বই বিতরণ, নারী শিক্ষার প্রসার, শিক্ষাসেবায় আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, শিক্ষানীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল ক্লাসরুম, ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃৃত্তি প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেতে সরকারের অর্জন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, শিক্ষক সংকট ও কোন দুষ্ট চক্রান্ত যাতে এই অর্জনকে ¤øান করে না দেয় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। একটি রাষ্ট্রে শিক্ষা ব্যবস্থা যত শক্তিশালী, সে রাষ্ট্রের ভিত্তি তত মজবুত হয়ে ওঠে। শিক্ষা ব্যবস্থার এ ভিত মজবুত করতে হলে শিক্ষা কারিকুলাম, পরীক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং গবেষণালব্ধ শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন কাঠামোসহ বিভিন্ন বৈষম্য দূর করতে হবে।

শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কোন পদ্ধতি চালু করার পূর্বে শিক্ষকদের বাস্তব-সম্মত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন শিক্ষককে দক্ষ করে তুলতে হবে। প্রশিক্ষনের অভাবে দক্ষতাহীন শিক্ষকের কারনে যেন পদ্ধতিটি ব্যর্থ হয়ে না যায়। কোন শিক্ষক যেন প্রশিক্ষণ এবং কোন ধরনের অধ্যয়ন ছাড়াই শ্রেণীকক্ষে পাঠদান না করান। সকল শিক্ষককে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে দক্ষতার সাথে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করাতে হবে এবং শিক্ষার্থীদেরকে যে কোন পদ্ধতির প্রয়োগ যথাযথভাবে করাতে হবে। মনে রাখতে হবে শিক্ষাই হলে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম। একজন শিক্ষার্থীকে বিকশিত করে তুলতে হলে পুথিগত বিদ্যার পাশাপাশি নির্দিষ্ট কারিকুলামের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিশ্বকে জানার আগ্রহ তৈরী করতে হবে। তাহলেই তার জ্ঞানের পরিধিও বাড়বে।

অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন জ্ঞানচর্চা করে লাভ নেই, শুধু একটি সার্টিফিকেট হলেই হবে। আমাদের পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য চাকুরী এ কথা ভাবা ঠিক না। কারন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানচর্চা করা, বিশ্বকে জানা, সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন এবং এ সম্পর্কেগবেষণা করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় যাতে কম না থাকে এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাতেরও সামঞ্জ্য থাকতে হবে। ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে যাতে দূরত্ব পরিলক্ষিত না হয়। ছাত্র-শিক্ষক মিলে যে জ্ঞানচর্চা হবে সেটিও যাতে অবরুদ্ধ না হয়ে যায়। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে নানা পরিবর্তন আসবে । কিন্তু পরিবর্তনশীল বিশ্বে পাঠ্যপুস্তকে নতুন নতুন তথ্য সংযুক্তির সঙ্গে শিক্ষকদেরও সঠিক যোগাযোগ থাকতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদেরও উপযুক্ত পাঠদান করা সম্ভব হয়। যাতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে পাঠ সঠিকভাবে বুঝে। শিক্ষকরা ঠিকমত শিক্ষার্থীদের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।নানা অযুহাতে পাঠদান বন্ধ রাখা যাবে না।

আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফল করছে। মনে রাখতে হবে ভাল ফলাফলের সাথে সাথে উদ্ভাবনী মেধাও তৈরী হতে হবে। কারন ভাল ফলাফল আর জ্ঞান এক জিনিস নয়। বর্তমান প্রজন্মকে জ্ঞান মেধায় বিকশিত হয়ে উঠতে হবে যাতে ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন না উঠতে পারে। তাহলেই আমরা জাতি হিসেবে মাথা উচু করে দাড়াতে পারবো।
প্রকৃতপক্ষে মেধার বিকাশ জরুরী। প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষা, মানসম্মত নিবেদিত শিক্ষক, শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ, গবেষণালব্ধ পদ্ধতির প্রয়োগ যাতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং প্রকৃতপক্ষে ফলাফল অর্জন নয়, মেধাবী হওয়ার প্রতিযোগিতায় শামিল হবে নতুন প্রজন্ম। নিত্য নতুন সমস্যা সামনে আসবে এবং তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে পরিকল্পিত ও গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতি, পাঠ্যক্রম, শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো প্রয়োজন পাশাপাশি শিক্ষকদেরও দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার। বদলানো দরকার শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আলাদা গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। পাঠ্যপুস্তকে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা দরকার, তাও হতে হবে অবশ্যই গবেষণালব্ধ। আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, কৃষ্টিকালচার ও সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন কিছু পাঠ্যপুস্তকে সংযুক্ত করা ঠিক হবে না। তাহলেই আাদের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা জাতির শক্তিশালী মেরুদন্ড তৈরি করতে কার্যকর হবে।

সামাজিক মর্যাদা, কাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে শিক্ষকদেরকে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়। বর্তমান সরকার শিক্ষকদের জাতীয় বেতনভুক্ত করে প্রশংসার দাবীদার হয়েছেন। তার পরেও শিক্ষকদের আর্থিক প্রনোদনা, পেশাগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, পেশাভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা, সরকারি-বেসরকারি বেতন বৈষম্য, ৫% প্রবৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ বোনাস, বৈশাখী ভাতা ইত্যাদিও সমস্যা দূর করতে হবে। শিক্ষক সমাজ যাতে অন্যান্য পেশাজীবিদের মতো দাবী-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তাছাড়াও শিক্ষক সমাজ যে বিভাজন রয়েছে যেমন: সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক, এমপিওভূক্ত, নন-এমপিওভূক্ত শিক্ষক এই সমস্ত বিভাজন দূর করে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করে শিক্ষাব্যবস্থার আরো উন্নতি করতে হবে।

বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হলেও জনসংখ্যার দিক দিয়ে অনেক বেশি এবং সম্পদ সীমিত।এই সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করবে।শিক্ষদের পরিচালনা, পরামর্শ, তদারকির ভার সঠিকভাবে শিক্ষকদের ওপর দিলে যাবতীয় বিষয় সহজেই এবং সুন্দরভাবে পরিচালিত হতে পারে। আর তখনই জাতি গঠনে ও মেধা বিকাশে শিক্ষকরা হবেন প্রকৃত কারিগর।

“শিক্ষাই হলো জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম”–
মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন–
প্রধান শিক্ষক–
বাড্ডা বালিক উচ্চ বিদ্যালয়।

আপনার মতামত লিখুন :

এই বিভাগের সর্বশেষ