রাশেদা রওনক খান: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত আমাদের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী থাকতে শৃংখলার অভাবে ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএসের চাল বিক্রি কার্যক্রম স্থগিত কেন? সরকার ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) চাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করলে জনমনে স্বস্তি নেমে আসে কিছুটা হলেও যে নিম্ন আয়ের মানুষ অন্তত এই দুর্দিনে দুমুঠো ভাত খেতে পারবে| ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার এই কার্যক্রমের ঘোষণা সত্যই নিম্ন আয়ের মানুষজনের জন্য অনেক স্বস্তির, সেই জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি| কিন্তু এই কার্যক্রমের ফলে জনসাধারণের ভিড়ে করোনা'র সংক্রমণ বেড়ে যাবে, এই চিন্তাকে মাথায় রেখে কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়।
মূল কারণ, ওএমএসের চাল বিক্রি কার্যক্রমে শৃঙ্খলা নেই! তো শৃঙ্খলার জন্য আমাদের দেশে সারাবছর ধরে যারা ট্রেনিং নেন এবং দেন সেই সেনাবাহিনীকে দায়িত্বটা দিলে সমস্যা তো অনেকটাই সমাধান হয়ে যায়! তারা তো এমনিতেই এখন মাঠে আছেন, কাজ করছেন অবিরত| যেহেতু মাঠেই আছেন তাই এই কাজটা করাও তাদের জন্য খুব বেশী কঠিন হবেনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বর্তমানে আমাদের দেশের অবস্থান শীর্ষে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণকারী এই দুই বাহিনী- বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও সততার ফলেই আজকের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
সেখানে জাতির এই দুর্যোগকালীন সময়ে এই দুই বাহিনীর উপর এই কার্যক্রম ছেড়ে দিলে আমাদের কারো শৃঙ্খলার জন্য চিন্তাও করতে হবেনা, সাথে প্রশাসনতো থাকছেই। সম্ভবত ডিলারশীপের একটা ব্যাপার আছে, সেটাতো তাদের উপস্থিতিতেও থাকতে পারে! এখন সকলের এক হয়ে কাজ করার সময়, এতো বিভক্তির কথা ভাবলে হবেনা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কার্যক্রমসমূহ এতোটা প্রশংসিত হয়ে কি লাভ যদি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তার সুফল না পায়? সারাবিশ্বেই যেকোনো সময়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনী ত্রাণ বিতরণ বা এই ধরণের সরকারী কার্যক্রমে সহায়তা করে থাকেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই দুর্যোগময় মুহূর্তে তারা এই কাজটি করতে পারেন সুশৃঙ্খলভাবে।
বিশেষ করে সেনাবাহিনী, এখন তারা মাঠে আছেন, কাজ করছেন, কিন্তু এই কাজটি উনারা শৃঙ্খলার সাথে যতটা ভাল পারবেন, অন্যদের পক্ষে ততটাই কঠিন| সরকার যদি এই মুহূর্তে তার বাহিনীসমূহকে এই কার্যক্রমে কাজে না লাগায়, তাহলে যে অবস্থা তাতে অনেক মানুষকেই হয় না খেয়ে মারা যাওয়া লাগবে নয়তো সমাজে অপরাধ করার প্রবণতা অনেক বেড়ে যাবে, যা কোনমতেই আমাদের কারো জন্যই ভাল কিছু নয়, বিশেষ করে সরকার প্রধানকেই তখন সব সামলাতে হবে, যা জটিল হতে জটিলতর বা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে! তাই সময় থাকতে বিষয়টি দ্রুত ভাবা দরকার।
(আমি দুঃখিত আজ নববর্ষের দিনে এইরকম পোস্ট দেবার জন্য। কিন্তু ভাবছিলাম, যাদের ঘরে চাল নেই, হয়তো কেউ কেউ চালের খুঁজে দিন কাটাচ্ছেন...দিনের রোজগারের টাকায় যাদের বাজার হয়, করোনার দুর্যোগে আজ নববর্ষের দিনে কাজ না থাকায় এই মানুষগুলো ভাল করে এক প্লেট ভাত খেতে পারছেন তো?)
ফেসবুক স্ট্যাটাস
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়