২১ এপ্রিল আমরা মুসলিম জাগরণের কবি স্যার মুহাম্মদ ইকবালের ৮২ তম মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত : ২২ এপ্রিল ২০২০

মৃত্যুকে রুখার সাধ্য জগৎ সংসারে কারও নেই। জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ জন্ম ও মৃত্যুর ফ্রেমে বন্দী। হাজার বছর ধরে এভাবে চলছে মৃত্যুর মিছিলের পদযাত্র। মানুষের জন্ম-মৃত্যু মহান আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা মোতাবেক হয়ে থাকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন- “তিনিই সেই সত্তা যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন এজন্য যে তিনি পরীক্ষা করে নিতে চান তোমাদের মধ্যে কে উত্তম আমল করে।” (আল কুরআনঃ সূরা মূলক)। প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, বাবা-মাকে হারিয়ে চলেছি। তবু আমরা সষ্ট্রাকে ভুলে যায়। আর যারা সষ্ট্রাকে ভুলে যায় তাদের দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ অর্জিত হয় না এটা ইতিহাসে প্রমাণিত। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে যারাই ক্ষমতার দাম্ভিকতায় ফেরাউনের ভূমিকা পালন করছে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে সময়ের ব্যবধানে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। মানুষ দুনিয়ার মোহে অন্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু সষ্ট্রাকে ভুলে গিয়ে নয়। পৃথিবীর সব মানুষকে সবাই মনে রাখে না। তবে দুই শ্রেণীর মানুষকে স্মরণ করে। এক শ্রেণীর মানুষকে ঘৃণার মাধ্যমে আরেক শ্রেণীর মানুষকে শ্রদ্ধার সঙ্গে। ইসলামের কান্ডারী হিসেবে যারা নিজেদের জীবনকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের সাথে রক্তের সর্ম্পক না থাকলেও মন থেকে তাদেরকে ভুলা যায় না। তাদেরই একজন কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস জাতিয়তাবাদের কবি ও দার্শনিক আল্লামা ইকবাল। তাঁর সর্ম্পকে কিছু কথা লিখা সত্যিই কঠিন। আল্লামা ইকবাল নামে ব্যাপক পরিচিত, ছিলেন বিভাগপূর্ব ভারতবর্ষের মুসলিম কবি, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষবিদ। তার ফার্সি ও উর্দু কবিতা আধুনিক যুগের ফার্সি ও উর্দু সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও একজন মহৎ মানবতাবাদী কবি হিসেবে তাঁর সুনাম সুখ্যাতি ছড়িয়ে আছে। অধ্যাপক উইলফ্রেড কান্টওয়েল স্মিথ তার মডার্ন ইসলাম ইন ইন্ডিয়া গ্রন্থে ইকবালকে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুসলিম কবি ও চিন্তাবিদ হিসেবে সম্মানিত করে বলেছেন বিশ্বব্যাপী তিনি যে মর্যাদা ও স্বীকৃতি পেয়েছেন তা থেকেই উপলব্ধি হবে তার মহত্ত্বের বিশালতা।

ইকবাল তার ধর্মীয় ও ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনের জন্যও বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন। তার একটি বিখ্যাত চিন্তা দর্শন হচ্ছে ভারতের মুসলমানদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। এই চিন্তাই বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। তার নাম মুহাম্মদ ইকবাল হলেও তিনি আল্লামা ইকবাল হিসেবেই অধিক পরিচিত। আল্লামা শব্দের অর্থ হচ্ছে শিক্ষাবিদ। তার ফার্সি সৃজনশীলতার জন্য ইরানেও তিনি ছিলেন সমধিক প্রসিদ্ধ; তিনি ইরানে ইকবাল-ই-লাহোরী নামে পরিচিত। অগ্রণী কবি হিসেবে তিনি ভারতীয়, পাকিস্তানি, ইরানি ও আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক এবং কবিদের দ্বারা ব্যাপক সমাদৃত। স্কটিশ মিশন কলেজে ইকবাল সর্বপ্রথম আধুনিক শিক্ষাপ্রাপ্ত হন। ইকবাল তার কাব্য প্রতিভার স্বীকৃতি পান তার শিক্ষক সাইয়িদ মীর হাসানের কাছ থেকে। স্কটিশ মিশন কলেজের পড়াশোনা শেষ করে ইকবাল লাহোরের সরকারি কলেজে ভর্তি হন। দর্শন, ইংরেজি ও আরবি সাহিত্য নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। ইকবাল ১৯০৫ সালে লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ব্রিটেনে থাকতেই ইকবাল সর্বপ্রথম রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন।

ওঠো দুনিয়ার গরীব ভুখারে জাগিয়ে দাও।
ধনিকের দ্বারে ত্রাসের কাঁপন লাগিয়ে দাও॥
কিষাণ-মজুর পায়না যে মাঠে শ্রমের ফল।
সে মাঠের সব শস্যে আগুন লাগিয়ে দাও॥

একজন পাঠকের ধারণা কবিতার উপরোক্ত চারটি লাইন হয়তো আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের অথবা তরুণ বিপ্লবী কবি সুকান্তের কবিতা থেকে উদ্ধৃত। প্রকৃত পক্ষে ঐ চার লাইন কবিতা মানবতাবাদের কবি আল্লামা ইকবালের। ইকবালকে নিয়ে যারা চর্চা করে কিংবা ইকবালের। উপর যারা গবেষণা করেন তারা ঠিকই জানেন যে, উপরোক্ত লাইনক’টি ইকবালের কবিতা থেকে উদ্ধৃত। ইকবাল যে প্রকৃতই নিপীড়িত মানুষের কবি তার কবিতা না পড়লে বোঝা যায় না। ইসলামী আদর্শের অমলিন রূপকার এবং স্বদেশ ও স্বজাতির জাগরণের বাণী-বাহক আল্লামা ইকবাল মূলত মানবতাবাদী কবি। তার কবিতার আবেদন ও সৃষ্টিশীল বার্তাও তাই বিশ্বমানবতার কাছেই। আল্লামা ইকবালের কবিতার এই বিশ্বজনীন আবেদনের জন্য তো বটেই পাশাপাশি মুসলিম জাগরণ ও ইসলামী আদর্শের বাণীবাহক বলেও তার কবিতাও কালজয়ী রচনার আবেদন বিশ্বব্যাপী উপমহাদেশ এবং সারা বিশ্বের পন্ডিত, বুদ্ধিজীবী বিদ্বজন মহলে এবং সকল শ্রেণীর পাঠক মহলে ব্যাপকতর ও গভীরতর মূর্ছনা নিয়ে উপস্থিত। আশ্চর্যের বিষয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাদৃত হলেও বাংলাদেশে ইকবাল যেন অপাঙ্ক্তেয়।

আজকের তরুণেরা রবীন্দ্রনাথ কিংবা হুমায়ুন আহাম্মেদকে যতটা চিনেন তার তুলনায় চেতনার কবি আল্লামা ইকবালকে একটু কমই চিনেন। কেউ হয়তো তাঁর নামটা শুনেছে মাত্র। যারা বয়সে প্রবীণ এবং ইসলামী ভাবধারার মানুষ তারা হয়তো আল্লামা ইকবাল সর্ম্পকে কিছুটা জানেন। তরুণ প্রজন্মের কাছে ইকবালের পরিচয় তুলে ধরায় এই নিবন্ধনের মূল উদ্দেশ্য।

প্রকৃত পক্ষে আল্লামা ইকবাল কবি নাকি দার্শনিক এ নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। প্রাচ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও দার্শনিক আল্লামা ইকবাল কবি হিসেবে বেশি পরিচিত হলেও তিনি মূলত বড়মাপের একজন দার্শনিক। জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় হতে দর্শন বিষয়ক গবেষণায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি তাঁর কবিতায়ও দর্শন-ভাবনার প্রকাশ সুস্পষ্ট।

এমনকি ড. ইকবালকে ইসলামি দর্শনের প্রথম সার্থক ব্যাখ্যাকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশ্বের প্রায় ডজন খানেক ভাষায় অনূদিত ‘আসরারে খুদি’ আল্লামা ইকবালের একটি বিখ্যাত দর্শন নির্ভর কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের জন্য বৃটিশ সরকার ইকবালকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভ‚ষিত করে।

সূফি কবি রুমী ছিলেন ইকবালের কাব্যপথের সর্বশ্রেষ্ঠ আলোকবর্তিকা। আল্লামা ইকবাল “আসরারে খুদি” কাব্যগ্রন্থে তাঁর উপর রুমীর আধ্যাত্মিক প্রভাবের বিবরণ দিয়ে রুমীর স্তুতি বর্ণণা করে লিখেছেন,-‘রুমীর প্রতিভায় অনুপ্রাণিত আমি / আবৃত্তি করে যাই গোপন রহস্যের মহাগ্রন্থ /আত্মা তাঁর জ্বলন্ত অগ্নিকুÐ / আমি শুধু স্ফুলিঙ্গ / যা জ্বলে ওঠে মুহূর্তের জন্য।’
ড. ইকবালের কবিতায় আল্লাহর প্রকৃতি, ভাগ্য-জীবন, আত্মাতত্ত¡, রাজনীতি, শিক্ষা, ধর্মতত্ত¡, নীতিবিদ্যা, সুফীতত্ত¡, দেশ ও জাতি, প্রেম প্রভৃতি বিষয়াবলী শক্তিশালী ভাষায় উৎকৃষ্ট শিল্পরূপে প্রকাশিত হয়েছে। সাধনা মুখর একজন জীবন দার্শনিক ইকবাল নিজের ক্ষুরধার কলমের সাহায্যে কাব্য কথায় সেগুলো প্রকাশ করেছেন সাবলিলভাবে। তাঁর প্রতিটি কবিতায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে দর্শন ফুটে উঠেছে। স্যার ড. ইকবালের দর্শন আবর্তিত হয়েছে আত্মাকে কেন্দ্র করে। মানবজীবনের বিকাশে আত্মার শক্তিশালী প্রভাব নিয়ে নিরলস গবেষণা করেছেন আল্লামা ইকবাল। ‘আসরায়ে খুদি’ কাব্যগ্রন্থ ইকবালের দার্শনিক ভিত্তি ‘আত্মা’ কেন্দ্রীক কালোত্তীর্ণ অসাধারণ একটি কাব্যগ্রন্থ। ‘আসরারে খুদি’ ১৯১৫ সালে লাহোর হতে ফার্সি ভাষায় প্রকাশিত হয়। ১৯২০ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সির অধ্যাপক ড. আরএ নিকলসন স্বপ্রণোদিত হয়ে গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। ১৯৪৫ সালে সৈয়দ আব্দুল মান্নান গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ করেন। বাংলা অনুবাদের কাব্য ভ‚মিকায় মুসলিম রেঁনেসার কবি ফররুখ আহমদ গ্রন্থটি সম্পর্কে মূল্যায়ন করেন এভাবে,-‘আসরারে খুদী, রমুজে বেখুদী মাতাল করেছে দিল।’
কবি ফররুখ আহমদ ‘আসরারে খুদী’র কাব্যানুবাদের ভ‚মিকায় আরো লিখেন,- ‘দেরী শুধু তার জিঞ্জির খোল্বার/ দেরী শুধু তার নীল নেশা ভোল্বার / তবু তোলপাড় শুনে সে তারার /উধাও বহ্নি-¯্রােতে /দুর্মর বেগে পয়ামের সুরে ওঠে কোথা রণরণী /ফারানের বুকে বহুদূর পর্বতে/ নতুন দিনের বিশাল পক্ষধ্বনি।’

বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে আল্লামা ইকবাল মোটেও অপরিচিত নন। বিশের দশকেই তার জীবনবাদী ও মানবতাবাদী কবিতা বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং এরপরেও হয়েছে। আল্লামা ইকবালের বহু গ্রন্থ বাংলা ভাষায় বিভিন্ন সময়ে অনূদিত হয়েছে। দার্শনিক ও কালজয়ী তথ্য ও আদর্শ সমৃদ্ধ গ্রন্থ ‘Reconstruction of Religions Thought in Islam’ ও ‘প্রজ্ঞান চর্চায় ইরান’ বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়াও আল্লামা ইকবালের আরও বহু গ্রন্থ বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্ব মানবতাকে ধ্বংসের গভীর আবর্ত থেকে উদ্ধার করার যে আর্তি আল্লামা ইকবালের কবিতায় ফুটে উঠেছে, তার অন্তরঙ্গ সুর বাংলার মানসকে আচ্ছন্ন করছে। বিশেষ করে বাংলার মুসলিম মানস তার কবিতার মধ্যে আত্ম আবিষ্কারের সন্ধান পেয়েছে।

সমগ্র উপমহাদেশের ন্যায় বাংলায়ও তিনি একজন জনপ্রিয় জীবনধর্মী কবি ও দার্শনিক। সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় আল্লামা ইকবাল অনূদিত হয়েছে। মানবতাবাদী কবি হিসেবে তিনি বিশ্বের সর্বত্র সমাদৃত হয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আল্লামা ইকবালের ওপর গবেষণা অব্যাহত আছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ববরেণ্য কবি আল্লামা ইকবালের জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী ব্যাপকভাবে পালিত হচ্ছে। বিভিন্ন ভাষায় তার গ্রন্থসমূহ ভাষান্তর হচ্ছে। তাঁর উপর স্বতন্ত্র পুস্তকাদি রচিত হচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি ছাড়াও সংকলন ও ক্রোড়পত্র বের হচ্ছে- এটা সত্যিই অনন্য। দেশ-বিদেশে ইকবালের উপর যেসব পুস্তক রচিত হয়েছে, এক হিসেব অনুযায়ী তার সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। মনে হয়, বিশ্বব্যাপী এক মহা প্রতিযোগিতা চলছে। ইকবালের জীবন ও কাব্যের এমন কোন দিক নেই, যার উপর গবেষণা হয়নি। তাঁর কবিতা, গজল, মর্সিয়া এবং গান হতাশাগ্রস্ত মানুষের মনে আশা ও আকাক্সক্ষার জন্ম দিয়েছে।

ইতিহাসের এক অশান্ত পরিবেশে ১৮৭৭ খৃস্টাব্দের ৯ নভেম্বর শুক্রবার ৩রা জিলক্বদ ১২৯৪ হিজরি ফজরের আযানের সময় বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট নগরীতে এক মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। একতলা একটি জীর্ণ বাড়ির যে প্রকোষ্ঠে তার জন্ম তা এখনও পাকিস্তান সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষতি। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্য এটি একটি দর্শনীয় বাড়ি।
ইকবালের পূর্ব-পুরুষগণ কাশ্মীর থেকে হিজরত করে শিয়ালকোটে বসতি স্থাপন করেন। গবেষণায় পাওয়া যায়, ইকবালের আদি পিতা ছিলেন বাবা লোলহাজরা বা লোলহাজী। স্বয়ং ইকবালই এই তথ্য প্রকাশ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ নূর মুহাম্মদ। তিনি ছিলেন শিয়ালকোটের অন্যতম টুপি ব্যবসায়ী। মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশু ইকবাল মাওলানা গুলাম হাসান ও সৈয়দ মীর হাসানের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। স্কচ মিশন স্কুলের শিক্ষক সৈয়দ মীর হাসান মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা প্রবর্তনে খুব আগ্রহী ছিলেন। পিতা শেখ নূর মুহাম্মদের অনুমতিক্রমে ইকবালকে তিনি স্কচ মিশন স্কুলে ভর্তি করেছেন। প্রাথমিক স্তর থেকে এফএ পর্যন্ত দশ বছরকাল তিনি সৈয়দ মীর হাসানের তত্ত্বাবধানে শিক্ষাগ্রহণ করেন। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সৈয়দ মীর হাসান অভিনব পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণ ইকবালের মানে ঐকান্তিক পিপাসা জাগিয়ে তোলেন। ১৮৮৮ সালে প্রাথমিক, ১৮৯১ সালে মিডল এবং ১৮৯৩ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তি ও মেডেলসহ উত্তীর্ণ হন। ১৮৯৫ সালে ইকবাল ঐ কলেজ থেকে এফএ পাস করেন এবং একই বছর ১৮ বছর বয়সে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে লাহোর গমন করেন। লাহোর সরকারি কলেজ থেকে ১৮৯৭ সালে স্নাতক ও ১৮৯৯ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

একই বছর তিনি লাহোরের ওরিয়েন্টাল কলেজে ইতিহাস ও দর্শন শাস্ত্রে অধ্যাপনার চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯০১ সালে লাহের সরকারি কলেজে ইংরেজি ও দর্শন শাস্ত্রে সহকারী অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ইংরেজি, আরবি ও দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী ইকবালের শিক্ষা জীবনে দ্বিতীয় শিক্ষক মীর হাসানের গভীর জ্ঞান এবং কলেজ জীবনে দর্শনের শিক্ষক টমাস আরনল্ড তার জীবনে প্রবল প্রভাব প্রতিফলিত করেন। টমাস আরনল্ডের উৎসাহে ১৯০৮ সালে যুক্তরাজ্যের Lincoln’s Inn থেকে ব্যারিস্টারী ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি পাশাপাশি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। জার্মানী থেকে ১৯০৭ সালে দর্শনে পিএইচডি অর্জন করেন। ১৯১২ সালে এক নতুন ইকবাল স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তদানীন্তন বিশ্বপরিস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বের অধঃপতনে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। মুসলমানদের এই দুঃসময়ে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে লক্ষ্য করেন যে, তুর্কী সাম্রাজ্য তখন নামেমাত্র ইসলামী রাষ্ট্র। পূর্ব ইউরোপ থেকে ইসলাম ধীরে ধীরে নির্বাসিত হচ্ছিল। দক্ষিণ রাশিয়ার মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে রুশ স¤্রাট একে একে গ্রাস করছিল। চীনের মুসলমানরা নিজেদের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছিল। বৃটিশ করায়ত্ত করে নিয়েছিল মিসর। ফ্রান্স মরক্কো দখলের ফন্দি করছিল। ইরানের অবস্থা ছিল মুমূর্ষু। ওলন্দাজ উৎপীড়নে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছিল না।

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর থেকে ভারতীয় মুসলমানদের ভাগ্যেও নেমে এসেছিল চরম দুর্দিন। এমনি পরাজয় ও নিঃসহায় অবস্থায় ভারতীয় মুসলমানদের আশা-ভরসার উৎস ছিল ওসমানীয় খেলাফত। তুর্কীরাই তখন সীমিত পরিসরে হলেও কিছুটা স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হয়েছিল। তুর্কীদের দিকেও হায়েনার লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল। মুসলমানদের এই শেষ সম্বল তুরস্ককেও তারা গ্রাস করতে থাবা বিস্তার করছিল। ওদিকে বৃটিশরা তুর্কীদের বিরুদ্ধে গ্রীসকে লেলিয়ে দেয়। এতে ভারতীয় মুসলমানরা বৃটিশের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। সেই যুগসন্ধিক্ষণে যেসব তরুণ মুক্তি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদের সম্মুখ ভাগে ছিলেন আধুনিক বিশ্বে ইসলামের সময়োপযোগী ব্যাখ্যাকার, ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলনের অগ্রসেনা, মানবতার মুক্তিকামী বিদ্রোহী কলম যুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক মহাকবি ইকবাল।

ইকবাল তন্দ্রাচ্ছন্ন মুসলিম জাতিকে আমৃত্যু কাব্যের চাবুক মেরে জাগ্রত করার প্রয়াস পান। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এমন কোন দিক ছিল না, যে বিষয়ে তিনি তার মেধাকে ব্যবহার করেননি। কাশ্মীর, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, স্পেন, ইন্দোনেশিয়াসহ প্রতিটি রাষ্ট্রের সমস্যা নিয়েই তিনি দিক-নির্দেশনা সম্বলিত দরদমাখা কাব্য রচনা করেন। মুসলিম জাতি তাঁর কাব্যে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও হৃত গৌরবের কথা স্মরণ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকে। তাদের সম্বিৎ ফিরে আসতে শুরু করে।

ইকবাল নিছক কবি বা দার্শনিকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন দূরদর্শী রজনীতিকও। সবচেয়ে বড় কথা, ইকবাল ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী কবি, ভাবুক ও রাজনীতিক। গতানুগতিকতার সোজাপথ ছেড়ে যে কবি-দার্শনিক সম্পূর্ণ এক নতুন পথে এগিয়ে গেছেন, তিনিই হলেন মহাকবি আল্লামা ইকবাল। তিনি কাব্যকে করেছেন জাতি গঠনের হাতিয়ার। এই বিশাল ব্যক্তি উর্দু, ফার্সি ও ইংরেজি ভাষায় মুসলিম উম্মাহ্কে যে পথের দিশা দিয়ে গেছেন, তা সম্পূর্ণ কুরআন, হাদিস, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের নির্যাস। তার রচনা সমগ্রে মিশে আছে ইসলাম।
ইকবাল ‘আর্ট ফর আর্টস সেক’-এ বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্প জীবনের জন্য। আর সেজন্যই তিনি নির্জীব জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কবিতাকে ব্যবহার করেন। তাঁর পদ্য গদ্য যেকোন রচনার উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র মুসলিম মিল্লাত, মুসলিম জাতির ঐক্য ও সংহতি। তিনি মুসলিম বিশ্বকে এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমৃত্যু কলম সৈনিক হিসেবে সংস্কার আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। ইকবালের প্রত্যাশা ছিল, ইসলাম একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই।
আল্লামা ইকবাল একটি যুগের স্রষ্টা, একটা নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্নদৃষ্টা, রুফকার। পাক ভারতীয় মুসলমানদের নিদমহলার মুয়াজ্জিন। তাঁর জ্যোতির্ময় বাণী মুসলিম জাহানে এনেছে নতুন জীবন, নব জাগরণ। তিনি তাঁর স্বপ্নের রাষ্ট্রের কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে এলাহাবাদে মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলনে ভারতে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমি ভারত ও ইসলাম দুয়েরই বৃহত্তর স্বার্থে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।’

ইকবাল খ্যাতিমান কবি, উদারপন্থী সংস্কারক। তার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। দেশ-কালের সীমানা ছাড়িয়ে তাঁর সৃষ্ট কর্মের অন্তর্নিহিত বাণী বিশ্বমানবের হৃদয়ে জন্ম দিয়েছে আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন। ইকবালের কাব্যের সার্বজনীন আবেদন মানুষের চিরায়ত স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষাকেই শুধু জাগ্রত করেনি, দুনিয়ার পিছিয়ে পড়া মানুষের নির্জীব হৃদয়েও প্রচ- আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ধুলায় পতিত মানুষের হাত ধরে তিনি যেমন তাকে তুলে এনেছেন নীলিমার কাছাকাছি। তেমনি জড় পৃথিবীর হলুদ বিবর্ণ চোখে এঁকে দিয়েছেন বিরাট স্বপ্ন।

একজন মহৎ মানবতাবাদী কবি হিসেবে যেমন রয়েছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, তেমনি ইসলামের অতি আধুনিক ব্যাখ্যাদাতা হিসেবেও তিনি সমান গৌরবের অধিকারী। পরাধীনতার শিকলে আটকেপড়া জাতির বুকফাটা কান্না তাঁকে বিচলিত করেছিল। তুরখাম থেকে আরাকান পর্যন্ত তিনি অভিনন্দিত হলেন গণমানুষের কবি হিসেবে। জনতার ভাষায় তিনি কবিতা লিখতেন, জনতার ভাবনা ও বেদনাকে তিনি স্থান দিতেন তার কবিতায়, আর সেই জনতাকে মুক্তির মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছানোর নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন আমৃত্যু। কুরআনুল করীমের বিশাল প্রাঙ্গণ, হাদীস শরীফ এবং ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য ছিল ইকবাল কাব্যের সারবস্তু। ইসলামকে তিনি একটি গতিহীন ধর্মের কতকগুলো সূত্র সর্বস্ব ব্যবস্থা পত্র মনে করতেন না। তাঁর কাছে ইসলাম ছিল এক প্রাণপ্রাচুর্য্য উন্নত জীবনের প্রতীক। তাঁর প্রত্যয় ছিল কুরআনের আদর্শের সুষ্ঠু অনুসরণ ও অনুশীলনই বিপর্যস্ত মুসলিম প্রাণে নয়া জিন্দেগীর তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে। আল্লামা ইকবাল এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব, কেবল মুসলিম জাহানের জন্যই নয়, সমগ্র মানবতার জন্য তিনি সম্মানিত এক মহান সৃষ্টি।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন : আল্লামা ইকবাল একটি নাম একটি জীবন্ত ইতিহাস। যার রচনার মধ্যে কবিত্ব ও জীবনদর্শন ও প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি আল্লামা ইকবাল নামেই পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, ইরান ও আফগানিস্তান জুড়ে সর্বাধিক পরিচিত। তাঁর কবিতা, দর্শন, চিন্তা, বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ, সংষ্কৃতি ও রাজনীতির বিষয়গুলো উঠে এসেছে। ইকবাল শুধু কবি কিংবা দার্শনিক ছিলেন তা কিন্তু নয়! তিনি একজন জ্ঞানতাপস রাজনীতিবিদ ছিলেন। প্রখ্যাত এই মুসলিম মনীষী যে সময়টাতে জন্মগ্রহণ করেছিল সে সময়টা ছিল মুসলিম মিল্লাতের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ। পাক ভারত উপমহাদেশের রাজত্ব মুসলমানদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পর মুসলিম সমাজ যখন অধঃপতনের শিকার হচ্ছিল ঠিক সেসময় আল্লামা ইকবাল অধঃপতিত এই সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোর দিশা দেখাতে কলম ধরেন। ইকবাল শুধু মুসলমানের কবি নন, তিনি মানবতার কবি তথা বিশ্বমানবের কবি ছিলেন। একজন মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। আল্লামা ইকবাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রায় ৩৬ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের নাম পরিবর্তন করে জহুরুল হক নামকরণ করা হয়। এমনকি পাঠ্যতালিকা হতে তাঁর রচনা ও জীবনীকে ডিলিট করে দেওয়া হয়। আল্লামা ইকবাল কোন দল বা গোষ্ঠীর কবি ছিলেন না। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী মানবতার কবি। তিনি ১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ নূর মুহাম্মদ পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মাতা ইমাম বিবি ছিলেন একজন ধর্মানুরাগী পরহেযগার মহিলা। মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশু ইকবাল সৈয়দ মীর হাসানের কাছে প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৮৯৩ সালে স্কচ মিশন হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে উর্ত্তীণ হন এবং মেডেল বৃত্তি লাভ করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮৯৫ সালে ইন্টারমেডিয়েট পাস করে লাহোর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৯৭ সালে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং আরবিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৮৯৯ সালে তিনি দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯০৫ সালে বৃত্তি লাভের পর লন্ডনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯০৭ সালে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯০৮ সালে জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছরে লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টারী এবং আরবিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯০৮ সালের জুলাই মাসে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করার জন্যে শিয়ালকোটের নাগরিক সমাজ তাঁকে বিশাল সংবর্ধনা দেন। পাঞ্জাব কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ১৯০৯ সালের মে মাসে তিনি লাহোর সরকারি কলেজে দর্শনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৩৩ সালের ৪ ডিসেম্বর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করে। তিনিই একমাত্র প্রথম ভারতীয় ব্যক্তি যাকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। শিক্ষকতা ও আইন ব্যবসা ছাড়াও সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। সর্বোপরি তিনি একজন বিখ্যাত মানবতার কবি ছিলেন।

উপমহাদেশের রাজনীতে ইকবালের ভূমিকা : আল্লামা ইকবাল রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পুরোপুরি পক্ষপাতী ছিলেন না, কিন্তু ১৯২৬ এর পরবর্তী সময়ে ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত তাঁকে রাজনীতিতে টেনে আনে এবং রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। ইকবালের কোন পরিচয়টি সবচেয়ে বেশি বড় তা আমি জানি না। তবে এইটুকু জানি যে তিনি মুসলিম মিল্লাতের প্রেরণার কবি ছিলেন। ইসলামের একজন দায়ী হিসেবে লিখনীর মাধ্যমে সংগ্রাম করেছেন। মুসলিম উম্মাকে উজ্জীবিত করার জন্য আসরারে খুদি বা খুদির দর্শন জাতিকে উপহার দিয়েছেন। ইকবালের রাজনৈতিক দর্শন মানুষ খেয়াল না করলেও উপমহাদেশের সমকালীন রাজনীতিতে তাঁর অবদান অস্বীকার করা যাবে না। রাজনীতির ক্ষেত্রে ইকবালের অবদান খুবই প্রণিধানযোগ্য। অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মূল প্রতিষ্ঠান ছিল। ইকবাল তদানীন্তন মুসলিম লীগে সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুসলিম লীগকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সাধ্যমতো কাজ করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে মুসলিম লীগ ভারতীয় রাজনীতিতে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল। ভারতের রাজনৈতিক বিবর্তনে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। তিনি ইসলামের ভাবধারা ও চেতনার সাথে আধুনিক জাতীয়তার সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তাঁর অপরিসীম ত্যাগ ও কোরবানীর স্বীকৃতি দিতে গিয়ে মরহুম কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা ও ইসলামের প্রতি অবিচল বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি সেই বিরল মনীষার অন্তর্গত যার মনন ও বুদ্ধিবৃত্তি উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ইসলামী আবাসভূমির রূপরেখা বিনির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনেক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু সেকুলার গণতন্ত্রকে পছন্দ করতে না। ইসলামভিত্তিক গণতন্ত্রকে প্রকৃত গণতন্ত্র বলে মনে করতেন; যেখানে আইন হবে মহান আরশের মালিকের আর শাসন হবে মানুষের। ১৯০৮ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। পাঞ্জাব আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে ইকবালের ভূমিকা স্বল্পকালীন হলেও বিভিন্ন দিক দিয়ে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য ভক্ত ও অনুরাগীরা পীড়াপীড়ি করতে থাকে। কিন্তু তাঁর পুরনো বন্ধু মিয়া আব্দুল আজিজের সাথে নির্বাচনী যুদ্ধে অংশগ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯২৬ সালে তিনি নির্বাচনে অংশ নেন এবং লাহোরের জনগণের সমর্থন ও ঐকান্তিক সহযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বী খান বাহাদুর মালিক মোহাম্মদ দীনকে তিন হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী ভূমি রাজস্বের উপর আয়কর উসুল করার প্রস্তাবের উপর পাঞ্জাব আইন সভায় ভাষণ দেন। ১৯২৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিল্লীতে অনুষ্ঠিত All Party Muslim Confeence-এ ভাষণে মুসলমানদের স্বতন্ত্র কার্যক্রম গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। পাঞ্জাবের গভর্নর স্যার ম্যালকম হেইলি স্যার ফজলে হোসেনের মাধ্যমে ইকবালকে হাইকোর্টের বিচারপতি বানানোর প্রস্তাব পাঠানো হলে ইকবাল তা প্রত্যাখ্যান করেন। ২৫ জুলাই ১৯২৭ সালে আল্লামা ইকবাল পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলিতে তিনটি প্রস্তাব পেশ করেন। এক. নবী করিম (সাঃ) কে অবমাননার পথ রুদ্ধ করার জন্য আইন জারি করার দাবি উত্থাপন করেন। দুই. পাঞ্জাবে মদ পান বন্ধের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি করেন। তিন. একটি স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে বলেন, আমি ভারত ও ইসলাম দুয়েরই বৃহত্তর স্বার্থে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করেন।

ইসলামের দায়ীর ভূমিকায় ইকবাল : ইকবাল তাঁর সুবিখ্যাত শিকওয়া কাব্যগ্রন্থে মুসলমানদের গৌরবময় যুগের কথা উল্লেখ করে বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে,এমন একটা সময় তো ছিল যখন মুসলমানেরা সংখ্যায় নগণ্য হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালার বাণীকে বহন করিবার জন্য তারা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করিতে প্রস্তুত ছিল। হককে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে তারা জীবনের রক্তটুকু বিলিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করেনি। ইকবাল আফসোস করে বলেছিলেন,আধুনিক কালে মুসলমানেরা এই মিল্লাতের ঐক্যকে নিঃশেষ করেছে এবং চারিত্রিক দৃঢ়তা ও আকাংখাকে হারিয়ে ফেলেছে। যে কারণে মুসলমানদের উপর বাতিল পন্থীদের জুলুমের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তিনি মুসলিম বিশ্বকে একই সুতায় গাঁথার জন্য আমৃত্যু একজন কলম যোদ্ধা হিসেবে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। ইকবালের প্রত্যাশা ছিল ইসলাম একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই। মহান আরশের মালিক যেন কালেমার পতাকে বিশ্বব্যাপী উড্ডীন করেন।

ইকবালের রচনাবলী : ওঠো দুনিয়ার গরীব ভুখারে জাগিয়ে দাও। ধনিকের দ্বারে ত্রাসের কাঁপন লাগিয়ে দাও। কিষাণ-মজুর পায়না যে মাঠে শ্রমের ফল। সে মাঠের সব শস্যে আগুন লাগিয়ে দাও। কবির কবিতার এই লাইনগুলোই প্রমাণ করে তিনি মানবতা ও নিপীড়িত মানুষের কবি ছিলেন। ইকবালের সাথে বাঙ্গালী মুসলমানের পরিচয় হয়েছিল মুলত ইতিহাসের একটি বিশেষ সময় ও কালের প্রেক্ষাপটে। আল্লামা ইকবাল শৈশবকালেই ক্যাবচর্চা শুরু করেন। স্কচ মিশন হাইস্কুলের ছাত্র অবস্থায় তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত ১৮৯১ সালে জবান পত্রিকায় হয়। ইকবালকে উর্দু ভাষার কবি বলা হলেও তিনি উর্দু ও ফার্সি ভাষার কবি ছিলেন। তার বারো হাজার কবিতার মধ্যে সাত হাজার কবিতাই ফারসি ভাষায় লেখা। ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ আসরার-ই-খুদি। তিনি এটি ফারসি ভাষায় লিখেছিলেন। এই গ্রন্থে তিনি খুদির দার্শনিক ব্যাখা দিয়েছেন। খুদি বলতে কুরআনে বর্ণিত রুহুকে বুঝিয়েছেন। যাকে আমরা সাধারণত আত্মা বলি। আর দ্বিতীয় কাব্য রুমুজ-ই-বেখুদি প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালে। এই গ্রন্থের কবিতার মাধ্যমে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, ইসলামী জীবনব্যবস্থাই হচ্ছে একটি জাতির উত্তম মাধ্যম। ১৯০৮ সাল থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে রচিত কবিতাগুলো মূলত মুসলমানদের অতীত গৌরব, বিশ্বজনীন ঐক্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং জাগরণের কথা তুলে ধরেছেন। ইকবালের কাজ ও রচনাবলি দিয়ে প্রভাবিত হয়েছিল তৎকালীন মুসলিম বিশ্ব। তার দার্শনিক চিন্তা ও সমকালীন মুসলিম বিশ্বে ঝড় তুলেছিল। পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদ, ভোগবাদ ও উগ্রবস্তুবাদ মানুষকে শান্তি দিতে পারে না এটা তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই একজন কলম যোদ্ধা হিসেবে অসংখ্য বই রচনা করেছেন। গদ্য ও পদ্য উভয় রচনায়ই পারদর্শী ছিলেন। নানান বিষয়ের উপর তিনি কলম ধরছেন। কবি হয়েও তিনি অর্থনীতির মতো জটিল বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছেন। অর্থনীতির উপর লেখা ইলমুল ইকতিসাদ। ১৯০৩ সালে লাহোর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক থাকাকালীন সময়ে তিনি এটি লিখেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ শিকওয়া এবং জবাব-ই-শিকওয়া। ১৯১৫ সালে আসরারে-ই-খুদী প্রকাশিত হওয়ার পর সর্বত্র সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু সূফী তরীকার অনুসারীরা বিরোধীতা করেন। এমনকি আল্লামা ইকবালকে কাফের হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা ইকবালের কবিতার মমার্থ না বুঝে কাফের বলেছিল তারাই আবার জওয়াব-ই-শিকওয়া কবিতাটি লিখার পর ইকবালকে আল্লামা উপাধীতে ভূষিত করেন। আল্লামা ইকবালের চিন্তার গভীরতার জন্যই ইকবালের কবিতা শুধু মুসলমানের জন্য নয়, গোটা বিশ্বমানব সমাজের জন্য হয়ে ওঠে নতুন চিন্তার দিকর্দশন। কেননা তিনি যে সংকট ও সমস্যার কথা চিন্তা করেছিলেন তা শুধু মুসলিম সমাজের নয়, বিশ্বসমাজ ব্যবস্থার সমস্যার কথা লিখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। ইকবালের উল্লেখযোগ্য রচনাবলীগুলো হচ্ছে-ইলমুল ইকতিসাদ, তারিখ-ই-হিন্দ হিন্দুস্তানের ইতিহাস, আসারার-ই-খুদী, পায়াম-ই-মাশরিক, বাঙ্গ-ই-দারা কারাভানের ডাক, যবূর-আযম, ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন, জাবিদনামা-শাশ্বত গাথা, বাল-ই-জিব্রীল-জিব্রাইলের ডানা ইত্যাদি।

দুশমনদের দৃষ্টিতে ইকবাল : কোনো মানুষের ব্যক্তিত্ব ও গুরুত্ব অনুধাবন করতে হলে তার দুশমনদের ওপর দৃষ্টিপাত করা উচিত। ইতিহাস সাক্ষী বড় মানুষদের সারা জীবন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের মুখোমুখী হতে হয়েছে। এ ধারা তাদের মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকে। আল্লামা ইকবাল একজন মানুষ । সঙ্গত কারণে তার মধ্যে বেশ কিছু মানবিক দুর্বলতা ছিল। সর্বদা নিজেকে গুনাহগার মানুষ মনে করতেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও কাব্যচর্চার মধ্যে ভুলক্রুটি চিহ্নিতকারীকে সমীহ করতেন। তবে ভিত্তিহীন অভিযোগ আরোপকারীকে উপেক্ষা করে চলতেন। ইকবালের ওপর ভিত্তিহীন অভিযোগ আরোপকারীদের মধ্যে আহমদিয়া জামায়াত ও কংগ্রেসি আলেমদের উল্লেখযোগ্য অংশ সম্পৃক্ত ছিল। লাহোরের উজিরখান মসজিদের মৌলভি দিদার আলী তার বিরুদ্ধে কুফরের ফতোয়া জারি করেছিলেন। অন্য দিকে কিছু আলেম স্যার খেতাব গ্রহণ করায় ইকবালকে ইংরেজদের এজেন্ট বলে আখ্যায়িত করেছিল। অথচ মাওলানা সাইয়্যেদ সুলায়মান নদভি ও মাওলানা শিবলী নুমানীর মতো বড় আলেমরা ইকবালের চিন্তা ও দর্শনের অনুরাগী ছিলেন। ইকবালের বিরোধীতা কিংবা সমালোচনা করা যাবে না বিষয়টি এমন নয়! তবে বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা পরিহার করা উচিত। পৃথিবীতে এমন বহু কবি জন্মগ্রহণ করেছে যারা মদ ও নর্তকীদের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে। কিন্তু আল্লামা ইকবাল সেদিক থেকে ব্যক্রিতম ছিলেন বলেই প্রেমের লড়াই ছাড়াই ভালো কবিতা জাতিকে উপহার দিয়েছেন।

বৈবাহিক জীবন: ১৮৯৩ সালে ১৬ বছর বয়সে গুজরাটের সিভিল সার্জন খান বাহাদুর আতা মুহম্মদের ১৯ বছর বয়স্কা কন্যার সাথে ১৬ বছর বয়স্ক ইকবালের বিয়ে হয়। উল্লেখযোগ্য, পিতার ইচ্ছায় এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এই স্ত্রীর গর্ভে এক কন্যা ও এক পুত্রের জন্ম হয়। ১৯১৯ সালে এই বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটে।
১৯০৯ সালে লাহোরের মুচি গেটের এক কাশ্মীরী পরিবারের সরদার বেগমের সাথে ইকবালের দ্বিতীয় বিয়ে হলেও ১৯১৩ সালে এই স্ত্রীকে গৃহে তুলে আনেন। ১৯২৪ সালে এই স্ত্রীর গর্ভে জাবিদ ইকবাল জন্মগ্রহণ করেন।

১৯১২ সালে লুধিয়ানাবাসী মওলানা পরিবারের কন্যা মোখতার বিবির সাথে ইকবালের তৃতীয় বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২৪ সালে সন্তান প্রসবকালে এই স্ত্রীর মৃত্যু হয়।

১৯১০ সালে ইকবালের মাতা ও ১৯৩০ সালে তাঁর পিতা ইনতিকাল করেন। আল্লামা ইকবালের সুযোগ্য পুত্র বিচারপতি ড. জাবেদ ইকবাল ‘যিন্দারোদ’ নামে তার উর্দু জীবনী গ্রন্থ ১৯৭৯ সালে প্রকাশ করেন যা সকল মহলে সমাদৃত হয়।

ইকবালের মৃত্যু : ১৯৩৪ সালের জানুয়ারী মাসে তার গলায় এক অজানা রোগ হয়। লাহোর ও দিল্লীতে এ রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করার পরও তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এ সময় তিনি লাহোরের পাঠানকোটের কাছে জামালপুরে দারুল ইসলাম ট্রাস্ট ইন্সটিটিউট স্থাপন করেন। ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং সামাজিক কাজে সহায়তা করাই ছিল প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য। একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে জনমত গঠন করতে প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এই কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তার শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে ১৯৩৪ সালে আইন ব্যবসা বন্ধ করে দেন। কয়েক মাস গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কাটানোর পর ১৯৩৮ সালের ২১ এপ্রিল ভোর ৫টা ১৪ মিনিটে চতুর্দিকে যখন মসজিদের মিনার হতে ফজরের আযান হচ্ছিল ঠিক সে সময় তিনি মহান প্রভুর ডাকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সরকারি অফিস-আদালত, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকদফা জানাযার পর লাখো ভক্ত অনুরাগীকে কাঁদিয়ে রাত পৌনে দশটার দিকে লাহোর দুর্গ ও বাদশাহী মসজিদের প্রবেশদ্বারের মাঝখানে হাজুরিবাগে তাকে কবর দেয়া হয়। পরিশেষে আরশের মালিকের কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাঁর দোষত্রুটিকে ক্ষমা করে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করেন।

লেখক : ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম , শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র প্রতিষ্ঠিতা I

আপনার মতামত লিখুন :