পরকীয়ার জেরে স্বামীকে হত্যা: স্ত্রী-পুত্রসহ ফরিদপুরের ভাঙ্গা ৪ জন গ্রেপ্তার
প্রকাশিত : ১১ জুন ২০২১

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চরকান্দা গ্রামে এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী ও পুত্রসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছে গ্রেপ্তারকৃতরা। পরকীয়ার জেরে ওই গৃহকর্তার স্ত্রীকে ফুসলিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত বছরের ২৬ অক্টোবর ভাঙ্গার চরকান্দা গ্রামে বিল থেকে সেকেন্দার আলী মোল্ল্যা (৫০) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হাফিজা বেগম (৪০) বাদী হয়ে নিহতের বড় ভাই খোকন মোল্যা, কবিরউদ্দিন ও খলিল মোল্যাসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘদিন যাবত জমি ও রেল লাইনের অধিগ্রহণকৃত এজমালি সম্পত্তির টাকা পয়সা নিয়ে বিরোধের কারণে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে বলে হাফেজা বেগম এজাহারে অভিযোগ করেন।
ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলা রুজুর পর থেকেই ওই গ্রামের আতিয়ার রহমান ভুলু মোল্যা (৬৫) নামে এক ব্যক্তি তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তিনি ভুলু মোল্ল্যার প্ররোচনাকেই মামলার মূল সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করলে রহস্য বেরিয়ে আসে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, নিহত সেকেন্দারের সাথে ভুলু মোল্যার ভাল সম্পর্ক ছিল। এই সুবাদে তার বাড়িতে যাতায়াত ছিল ভুলুর। অন্যদিকে, বড় ভাই খোকন মোল্লা ও চাচাতো ভাই জমির মোল্লার সাথে রেলওয়ের অধিগ্রহণের আওতায় পড়া ২৭ শতাংশ জমির প্রাপ্ত টাকা ভাগ বণ্টন নিয়ে বিরোধ ছিল সেকেন্দারের। অপরদিকে গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আতিয়ার রহমান ভুলুর সাথে খোকন মোল্ল্যার বিরোধ ছিল। এই সুযোগকেই কাজে লাগায় সে। একপর্যায়ে ভুলুর সাথে সেকেন্দারের স্ত্রী হাফেজার পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। তখন সে সংসারের ঝামেলা ও টাকা পয়সার অভাবের কথা বলে সেকেন্দারকে হত্যায় স্ত্রী হাফেজাকে প্ররোচিত করে।
তিনি জানান, ঘটনার আগে সন্ধ্যায় হত্যার পরিকল্পনা মতো ভুলু হাফেজার হাতে চারটি ঘুমের ওষুধ দিয়ে সেগুলো খাইয়ে দিতে বলে সেকেন্দারকে। পরেরদিন সন্ধ্যায় কথামতো হাফেজা তার স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবার বাড়ির পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। তখন সে টলছিল। সেখানে ভুলু ও তার ছেলে সম্রাট মিলে তাকে হত্যা করে।
এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেকেন্দারকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ নৌকায় তোলার সময় সেকেন্দারের ছেলে হোসাইন তাদের দেখে ফেলে। এসময় হোসাইনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে সাথে নিয়েই নৌকায় সেকেন্দারের লাশ তুলে বিলের মাঝে ফেলে রাখে।
মামলাটি তদন্তের একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার ভুলু মোল্যা ও তার ছেলে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার আসল রহস্য বেরিয়ে আসে বলে পুলিশ জানায়। এরপর গত বুধবার সেকেন্দার মোল্যার স্ত্রী হাফেজা বেগম ও ছেলে হোসাইনকে শাহ মুল্লুকদি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আটককৃতদের ফরিদপুরের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট ৩নং আমলী আদালতে প্রেরণ করা হলে তারা বিচারক আসিফ আকরামের সামনে সেকেন্দার আলীকে হত্যার ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।