ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর নতুন করে সামনে এসেছে ২০১০ সালের একটি ঘটনা। অনলাইনে ভাইরাল হচ্ছে সেই দিনের স্মৃতি-বেগম খালেদা জিয়ার দুঃসহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা, কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেওয়া তার কিছু বক্তব্য, যা এখন অনেকের কাছে যেন ভবিষ্যদ্বাণীর মতো সত্যে পরিণত হয়েছে।
২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর। সেদিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ঘটনাস্থলে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং উচ্ছেদের পর ক্ষমতাসীন দলের প্রধান শেখ হাসিনার কিছু তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্যও তখন ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল।
সেদিন বাড়িটি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। সেই মুহূর্তে অসহায় এক বিধবার মতো কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নিজের স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়িতে কাটানো দীর্ঘ চার দশকের স্মৃতি যেন মুহূর্তেই মুছে যায়। তিনি বলেছিলেন “আমাকে এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। টেনে-হিঁচড়ে বাড়ির বাইরে আনা হয়েছে।”
সাংবাদিকদের কাছে আবেগঘন কণ্ঠে খালেদা জিয়া জানান, “আমি প্রায় ৪০ বছর এই বাড়িতে কাটিয়েছি। আমার স্বামী জীবন দেওয়ার পর তার স্মৃতিগুলো নিয়ে আমি এখানে ছিলাম। আজ আমাকে অমানবিক আচরণের শিকার হতে হলো।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সারাদিন আমাকে কিছু খেতেও দেওয়া হয়নি। অথচ তারা মিথ্যা প্রচার করছে যে আমি নাকি স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে এসেছি। একজন তো সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছে ‘নিজে যেতে না চাইলে তুলে নিয়ে যাব।’”
উচ্ছেদের চিত্র তুলে ধরে বেগম জিয়া বলেন, “তারা জোর করে আমাকে বের করে দিয়েছে। গ্রিল কেটে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে। আমার লোকজনকে মারধর করেছে। বেডরুমের দরজা লাথি মেরে ভেঙেছে। আমাকে টেনে বাইরে এনেছে। আমি বিরোধী দলের নেত্রী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের স্ত্রী-এই মর্যাদার সামান্য সম্মানও দেখায়নি তারা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তারা কতটা নির্মম আচরণ করতে পারে, তা এখান থেকেই বোঝা যায়।”
গভীর কষ্টে ভারী হয়ে আসা কণ্ঠে তিনি তখন বলেছিলেন- “আমি এর বিচার মহান আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম। দেশবাসীর কাছেও বিচার চাই।”
সময় বদলেছে, রাজনীতির পালাবদল হয়েছে। কিন্তু ২০১০ সালের সেই কান্নাজড়িত দিনের ঘটনা আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে-যখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় প্রকাশিত হয়েছে এবং দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :