বিয়ের আগে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক কে না বলি: সামসুদ্দোহা পিন্টু

প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর ২০২০

বিয়ের আগে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক কে না বলি,
বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখি।

সম্প্রতি ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন হওয়ার পর থেকে দেখছি অনেকেই আপত্তি জানাচ্ছেন, যে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করলে কেন ধর্ষণ মামলা হবে। অনেকেই বলছেন মেয়ে লোভী মেয়ে কেন বিয়ের লোভে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। আবার অনেকেই বলছেন যে, দুই জনকেই শাস্তি দিতে হবে. আমি অনেক নারীদেরও দেখেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে এর পক্ষে সাফাই করে।

অনেকেই বলে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ এইটা কেমন কথা এটা কেন ধর্ষণ মামলা হবে ? আচ্ছা ধরুন ‘’জ’’ একটি ছেলে আর ‘’র’’ একটি মেয়ে । ‘’জ’’ ‘’র’’ এর কাছে গিয়ে বললো যে আমি আপনাকে বিয়ে করব আপনি আমার সাথে চলুন আমি আপনার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাই । তখন ‘’র’’ কি করবে? তখন সে কি ‘’জ’’ সাথে যাবে? না কি ‘’জ’’ কে তখন কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারবে? কি মনে হয় আপনার? সে অবশই কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারবে আর না হয় সে যেকোনো একটা প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে চলে যাবে। কারণ আমাদের বাংগালী নারীদের কাছে তার নিজের সম্মান অনেক দামী ‘’র’’ কে যদি ‘’জ’’ এর রুম এ নিতে চায় তাহলে ‘’জ’’ কে ‘’র’’ এর সাথে সম্পর্ক করতে হবে তার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে তাকে দেখাতে হবে যে তোমার জন্য আমি সব করতে পারি, তোমাকে বিয়ে করে তোমার সাথে সারা জীবন এক সাথে কাটিয়ে দিবো ইত্যাদি ইত্যাদি । ‘’জ’’ এর চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র এই সব দেখিয়ে একদিন তাকে ‘’জ’’ এর বিছানায় নিতে হবে ।

এখন আসি ‘’জ’’ যে ‘’র’’ এর সাথে বিছানায় গেলো, কেন গেলো? কারণ ‘’র’’ ‘’জ’’ কে বিশ্বাস করে ভালোবাসে, তার পরিবারের পর যদি কাউকে বিশ্বাস করে থাকে সে হলো ‘’র’’ কে. আর এই কারণেই ‘’র’’ ‘’জ’’ এর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে. আসুন এবার একটু অন্য ভাবে বুঝি । ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন অন্য একটি লোক এসে আপনাকে গুলি করলো সাথে সাথে আপনি মারা গেলো তখন এটাকে কি বলবেন ? অবশই বলবেন তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এবার আসেন আরেকটু অন্য ভাবে বুঝি, আপনার সাথে একজন ব্যক্তির পরিচয় হয়েছে । একসময় আপনার সাথে তার বন্ধুত্ব সম্পর্ক হয় । এক সময় সে আপনার বিশেষ অর্জন করতে সক্ষম হয় । হটাৎ একদিন সে আপনাকে বললো চলো বন্ধু দুজন মিলে ব্যবসা করি এক বছরেই তুমি ধোনি হয়ে যাবে। আপনি তাকে বিশ্বাস করে তার সাথে গেলেন সে আপনার টাকা পয়সা রেখে আপনাকে মেরে ফেললো। এটাকে কি বলবেন? অবশই হত্যা এবং ছিনতাই করা হয়েছে। আপনি কি তখন বলবেন যে, সে লোভে গেছে দুই জনেরই শাস্তি হওয়া উচিত । সে কেন গেলো সে একটা লোভী। এটাকে কখনোই হত্যা বলা যাবে না ।

ঠিক একই ভাবে একটি ছেলে যখন ভালোবাসার অভিনয় করে বিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে সম্পর্কের ইতি টানে ঠিক তখন এটাকে ধর্ষণ বলে বিবেচনা করা হয় । আর মামলার ক্ষেত্রে বিয়ের প্রলোভন এর কথা উল্লেখ করা হয়ে কারণ ভুক্তভুগি প্রতারণার শিকার হয়ে ধর্ষিত হয়েছে দেখানো হয় । যদি উপরের উদহারণ আপনার চোখে হত্যা হয়ে থাকে তাহলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কটা করাটাও ধর্ষণ।

আসলে এই দোষ আপনার নয় এইটা হলো পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের প্রভাবের কারণে আপনার কাছে মনে হয় যে বিয়ে প্রলোভনে যেহেতু শারীরিক সম্পর্ক করেছে সেহেতু মেয়েও দোষী এবং লোভী। আপনি শুধু বিয়ের প্রলোভন টাই দেখছেন কিন্তু মেয়েটাও যে তার সম্মান খুইয়েছেন শুধু মাত্র ভালোবাসা এবং বিশ্বাস করে সেটা দেখছেন না । সঠিক বিচার করার ক্ষমতা আপনার আছে কিন্তু নারীর বেলায় আপনার বিচারের ধরণ পাল্টে যাচ্ছে আর আমাদের দেশে অনেক ব্রেকআপ হয় প্রতিনিয়ত, সবাই কিন্তু মামলা করছে না। যদি সবাই ধর্ষণ মামলা করতো তাহলে ধর্ষণ মামলা সংখ্যা বেশি থাকতো কোর্ট এবং থানায় ।

একটি মেয়ে তখনি ধর্ষণ মামলা করতে উদ্ধত হয় যখন সে সামাজিক, শারীরিক, মানসিক এবং পারিবারিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই আইনে আপনার কেন ভয় হচ্ছে আপনি কেন ভয় পাচ্ছেন ? আপনি কেন এই আইনের বিরোধিতা করছেন? আপনি তো ভালোমানুষ সৎ চরিত্রভান । আপনি তো বিয়ের আগে কোনো মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করছেন না । তাহলে আপনার তো এই আইন নিয়ে মাথা ব্যথা থাকার কোথাও নয়।

যাদের এই আইন নিয়ে মাথা ব্যথা আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলবো বিয়ের আগে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কে না বলুন বিয়ের প্রলোভন এর মামলা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখুন সবাই যে ভালো তা কিন্তু নয় খারাপও আছে। কিন্তু খারাপ কে সামনে রেখে ভালো কে পিছনে ঠেলে দিয়ে, খারাপ এর কাতারে সবাইকে রেখে বিচার করা ঠিক হবে না। আপনার এই দৃষ্টি ভঙ্গী কারণে যারা এই ধরণের কাজ করে একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিসে তারা আরো সাহস পেয়ে যাবে। তাই আসুন নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাই, তাদের প্রতি বিচার করি যুক্তি দিয়ে।

সামসুদ্দোহা পিন্টু
সহকারী পরিচালক
লিগ্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ (ল্যাব)
(মানবাধিকার সংস্থা)

 

আপনার মতামত লিখুন :