হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ, উৎসব মূখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ জেলেরা

প্রকাশিত : ২২ মে ২০২০

আমির হামজা, রাউজান প্রতিনিধি।। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। ২১ মে দিবাগত রাতে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে। ডিম সংগ্রহকরীরা ৭ মে থেকে ভারি বর্ষণের অপেক্ষায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মা মাছ ডিম ছাড়েনি। প্রতিবছর এপ্রিল- মে মাসে অমাবস্যা, পূর্নিমার জোয়াড়ে ডিম ছাড়ে মা মাছ। ১৯ মে থেকে ভারি বর্ষণে আশায় বুক বাঁধে হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। ২২মে সকাল ৭টার দিকে মা মাছ দলে দলে নদীর তলদেশ থেকে উঠে এসে ডিম ছাড়া শুরু করে। হালদা নদী পরিদর্শন ও ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা উৎসব মূখর পরিবেশে নেট জাল পেতে পর্যাপ্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন।

অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শত শত নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রকারীরা নদীতে অবস্থান নেয়। রাতে পর্যাপ্ত ডিম সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলেও শুক্রবার সকাল থেকে পর্যাপ্ত ডিম জালে ধরা পরে। আজিমের ঘাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী রোসাগীর জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় আশাব্যঞ্জক ডিম পেয়েছেন তিনি। একই এলাকার শাহাজান, মামুন, পরান জলদাশ, সাধন জলদাশ, পাভেল জলদাশ, প্রফুল্ল, সুবল, মুন্সী মিয়া, জাহাঙ্গীর, সেলিম ও বেলাল মিয়া আশানুরূপ ডিম সংগ্রহের কথা জানান। রামদাশ হাট এলাকার চন্দন দাশ জানান, তার ৭টি নৌকা ডিম সংগ্রহ কাজে নিয়োজিত ছিল। ৭টি নৌকা দিয়ে ১৪/১৫ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। অংকুরিঘোনা এলাকার মিলন বড়ুয়া জানান, ৪টি নৌকা নিয়ে ১৫/১৬ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। গড়ে প্রতিটি নৌকা ৩/৪ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহের খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া পশ্চিম গুজরা, মাতুয়া, নাপিতের ঘাটা, গড়দুয়ারা, উত্তর মাদার্শা, খলিফারঘোনা, বাড়িঘোনা, উরকিরচর এলকার বিভিন্ন স্পর্টে ডিম সংগ্রহের মহোৎসব চলে। হালদায় মা মাছের ডিম সংগ্রহের দৃশ্য সরেজমিনে পরিদর্শনে আসা রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ জানান, হালদা নদী পুরো বছর নজরদারীতে ছিল উপজেলা প্রশাসনের। যার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় মা মাছ বেশী ডিম ছেড়েছে। তিনি বলেন, আমি ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলেছি। তারা প্রতি নৌকা ৫/৬ বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছে। তারা খুব খুশি হয়ে বলেছে অনেক বছর পর হালদার মা মাছ আশার প্রদীপ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, এখনো (বেলা২টা) ডিম সংগ্রহ চলছে। কি পরিমান জেলেরা ডিম সংগ্রহ করেছে কালকের মধ্যে জানা যাবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী জানান, ডিম সংগ্রহকারীরা আত্বতৃপ্তিতে ডিম সংগ্রহ করেছেন। সমৃদ্ধি পথে হালদা নদী। দূষণ বন্ধ হয়েছে। সচ্ছ পানিতে নিরাপদে মা মাছ ডিম দিয়েছে।

এখন দরকার মা মাছকে সুরক্ষা দেয়া। সেলক্ষ্যে নৌ পুলিশ পাহাড়ায় রয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পীযূষ প্রভা কর জানান, মা মাছ ডিম ছাড়ার পর ডিম সংগ্রহকারী লোকজন নৌকা নিয়ে নদীতে নামে। তারা আগে থেকে প্রস্তুত ছিল। এবার হালকা বৃষ্টি ও ঘুর্ণিঝরের প্রভাবে মা মাছ ডিম ছেড়েছে বলে তিনি জানান। সরকারি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৫ মে.ট ডিম ছাড়ে হালদায় মা মাছ। আহরণ করা প্রায় ১০ হাজার কেজি ডিম থেকে ২০০ কেজির বেশি রেণু উৎপাদিত হয়েছিল। তবে এবার ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিম আহরণের আশা করছেন স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী, প্রশাসন ও হালদা গবেষণা সেন্টার।

 

আপনার মতামত লিখুন :