দারিদ্র্যতা বাধা হতে পারেনি বিশ্বকাপ বিজয়ী ক্রিকেটার রকিবুলের

প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রূপসী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম নগরবেড়া উত্তর বাঁশাটী। সেই গ্রামসহ পুরো উপজেলায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এ গ্রামেই অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক রকিবুল হাসানের বাড়ি। দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি মো. খলিলুর রহমানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নানা তথ্য। খুবই সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া রকিবুল হাসানের গর্বিত পিতা শহীদ মিয়া একজন গাড়িচালক। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রকিবুল দ্বিতীয়। বড়বোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী,রকিবুল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আর তার ছোট ভাই পড়ে নবম শ্রেণিতে।

অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে জয়সূচক রান করে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন রকিবুল হাসান। ২৫ বলে ৯ রান যদিও তেমন কিছু নয়, কিন্তু দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে অধিনায়ক আকবর আলীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এই ক্রিকেটার। পুরো টুর্নামেন্টেই বল হাতেও দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন তিনি। রকিবুল হাসানের বিজয় সূচক রান সংগ্রহের পর থেকেই তার নিজ গ্রামসহ সারা ফুলপুরে বইছে আনন্দের বন্যা। উপজেলা সদরসহ পাড়ায় পাড়ায় চলছে মিষ্টিমুখ ও আনন্দ উল্লাস।

এ ছাড়াও উপজেলা চত্বরে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ও ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অনেকেই তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে অভিনন্দন জানান। ফুলপুর উপজেলা শহরে বের হয় আনন্দ মিছিল। ফুলপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ছেলে ‘ইয়ং টাইগার’ রকিবুল হাসান এখন সবার গর্ব।

দারিদ্র্যতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি যুব ক্রিকেটার রকিবুল হাসানের। সফলতার দ্বারপ্রান্তে উড়তে জীবনের সঙ্গে করতে হয়েছে বহু যুদ্ধ। দরিদ্র বাবার আয় থেকে কোচিংয়ে যে টাকা দেওয়া হতো সেই টাকা থেকে বাঁচিয়ে ক্রিকেট অনুশীলন করতে যেতেন রকিবুল। লেখাপড়ার চেয়ে খেলাধুলার প্রতি ছিল তার বেশি আগ্রহ। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে করতে এক পর্যায়ে ঢাকার একটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন। তারপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক সফলতা আসতে থাকে তার ঝুলিতে।

আজ মঙ্গলবার রকিবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় পরিত্যক্ত একটি ছোট্ট টিনের ঘর, একটি রান্নার ঘর রয়েছে তার বাড়িতে। এলাকার প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও তাদের বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটি প্রায় অকেজো। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,রকিবুলের বাবা ১৫ বছর ধরে ঢাকায় ভাড়া বাসায় থেকে গাড়ি চালান। তার এক ফুফু স্বামীসহ তাদের গ্রামের বাড়ি পাহারা দেন।

ফুফা কামাল হোসেন জানান, মেধাবী ও মিশুক হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়ভাজন রকিবুল। বাড়িতে এসে সবার খোঁজখবর নেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটার অনুর্ধ্ব দলের কোচের পছন্দের তালিকায় এ মেধাবী ক্রিকেটার বাড়িতে আসলেই মোবাইলে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে গ্রামের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। রকিবুলের জন্য এলাকার সবাই গর্ববোধ করেন বলেও জানান ফুফা কামাল হোসেন।

আপনার মতামত লিখুন :