মারা যাওয়ার আগে যা করছিলেন ম্যারাডোনা

প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০২০

মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের অপারেশন থেকে ২৫ নভেম্বরের মহাপ্রয়াণ। মাঝে কেটে গেছে বেশকিছু দিন। এই সময়ে তার সঙ্গে যারা ছিলেন, সবাই আশাবাদী ছিলেন, সুস্থ হয়ে উঠবেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদরোগে মৃত্যুর সঙ্গে তার ব্রেন টিউমারের কোনো সম্পর্ক নেই। বুয়েন্স আয়ার্সের কাছেই যে ঘরটিতে ম্যারাডোনা থাকছিলেন শেষ দিনগুলোতে, চিকিৎসাব্যবস্থার সব আয়োজনই ছিল সে ঘরে। সেখানে বেশ ভালোও ছিলেন। সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক লিওপোলদো লুকু তাকে নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলেন।

নভেম্বর ২৫, মৃত্যুর দিন

অন্য দিনের তুলনায় এদিন কিছুটা আগে ঘুম থেকে ওঠেন ম্যারাডোনা। আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে। চারপাশে একটু হাঁটাহাঁটি করেন তিনি। কি যেন একটা নেন, তারপর আবার গিয়ে শুয়ে পড়েন। সেসময় তার পাশে ছিলেন তার ডান হাত ম্যাক্সি, তার ব্যক্তিগত আইনজীবী জনি, তার একজন ভাগ্নে এবং বাড়ির দারোয়ান। সকাল ১২টার দিকে ম্যারাডোনার শরীর অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সেসময় তার পাশে ছিলেন সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা একজন সুইস নার্স এবং একজন মনোবিদ। এসময় তাকে নড়তে চড়তে না দেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে তখনই তার পালস বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় পত্রিকা ক্লারিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা প্রকাশ করে সবার আগে।

কিছুক্ষণ পরই অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায়। মোট ৫টি অ্যাম্বুলেন্স আসে। তাৎক্ষণিকভাবে তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা লোকজন কিছুই করতে পারেননি। হাসপাতালে নেয়ার পথে ম্যারাডোনার সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ে ডালমা, জিয়ান্না ও জানা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করা হয়, তবে তাকে বাঁচানো যায়নি। আকস্মিক তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। তিনি চলে গেলেন একেবারে নীরবে-নিভৃতে-শান্তিতে।

মৃত্যুর আগের দিনগুলো

সান আন্দ্রেসে নিজের বাড়িতে বেশ নিরিবিলি জীবনযাপন করছিলেন ম্যারাডোনা। তার আশেপাশে খুব লোককেই দেখা গেছে এই দিনগুলোতে। ব্যক্তিগত চিকিৎসক লিওপোলদো লুকু যেমনটি বলছিলেন, তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠছিলাম আমরা। বেশ বাঁধাধরা একটা জীবনযাপন করার কথা বলা হয় তাকে। শেষের দিনগুলোতে ম্যারাডোনা চেয়েছিলেন জিমন্যাস্টিকসের অনুশীলন করতে। তবে চিকিৎসকরা তাকে সে অনুমতি দেয় নি। কেউই ভাবতে পারেনি, এত দ্রুত এমন ট্র্যাজেডির সম্মুখীন হতে হবে সবাইকে।

টিউমারের আগের দিনগুলো

৩ নভেম্বর ব্রেন টিউমারের অপারেশন করা হয় তার। অন্যান্য জটিল রোগের মতোই এটিও তাকে ভুগিয়েছে বেশ। তিনি সুস্থ ছিলেন না। এসময় তার মন মেজাজও ভালো ছিল না। স্প্যানিশ গণমাধ্যম মার্কার সাংবাদিক হুয়ান ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে জন্মদিনের আগে কথা হয় ম্যারাডোনার। সেসময় দিয়েগো তাকে জানিয়েছিলেন, তার মন মেজাজ খুবই খারাপ। ক্যাস্ট্রো তার সঙ্গে দেখাও করতে চেয়েছিলেন। তবে করোনার কারণে আর্জেন্টিনায় ভ্রমণ করায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ক্যাস্ট্রো লিখেছেন, ম্যারাডোনা মূলত চিকিৎসার অভাবে মারা যান নি। তিনি মারা গেছেন মনস্তাত্বিকভাবে।

মূলত ২টা বিষয় তাকে বড়সড় আঘাত দিয়েছে; প্রথমত, করোনা মহামারি। তিনি কোথাও যেতে পারছিলেন না, অনুশীলন করতে পারছিলেন না। বছরের পর বছর তিনি ফুটবলকে আঁকড়ে বেঁচেছিলেন। কিন্তু মহামারির কারণে ফুটবলের ধারেকাছে যেতে পারছিলেন না। এটা তাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, পরিবারের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার ধারেকাছে কেউ ঘেঁষতে পারছিলেন না। এমনকি পরিবারের লোকজনও তার সঙ্গে ছিলেন না। নিজের ৬০ তম জন্মদিনে কাউকে সঙ্গে না পাওয়ায় বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ম্যারাডোনা।

 

আপনার মতামত লিখুন :