ইসলাম ধর্মকেই সবচেয়ে বেশি ভয় ও ঘৃণা করে ব্রিটিশরা

প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০২২

নতুন একটি গবেষণায় ব্রিটিশদের ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতির ভয়াবহ এক চিত্র উঠে এসেছে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্ম হিসেবে ইসলামকেই সবচেয়ে বেশি ভয় ও ঘৃণা করে ব্রিটিশরা। আর জনগোষ্ঠী হিসেবে তাদের ঘৃণার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে মুসলিমরা। বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির গবেষকদের ওই গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রায় প্রতি চার জনের একজন ব্রিটিশ মুসলিম এবং ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। তাদের ঘৃণার তালিকায় জিপসি এবং আইরিশ যাযাবরদের পরই মুসলিমদের অবস্থান।

জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটিশ মানুষদের এক চতুর্থাংশেরও বেশি (২৫.৯%) মুসলমানদের প্রতি নেতিবাচক অনুভূতি বোধ করেন এবং প্রায় ১০ শতাংশ ব্রিটিশ মানুষ ‘খুব নেতিবাচক’ অনুভূতি বোধ করেন। ১৬৬৭ জনের ওপর চালানো জরিপে দেখা গেছে বেশিরভাগ ব্রিটিশ অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ইসলাম সম্পর্কেই সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। ওই জরিপে দেখা গেছে, প্রায় পাঁচজনের মধ্যে একজন (১৮.১%) ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে সমস্ত মুসলিম অভিবাসন নিষিদ্ধ করতে চান এবং ৯.৫ শতাংশ তা ‘জোরালোভাবে সমর্থন করেন’। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ব্রিটিশরা ইসলাম সম্পর্কে রায় দিতে খুবই ইচ্ছুক, কিন্তু ধর্ম সম্পর্কে তাদের প্রকৃত জ্ঞান খুবই কম।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘ব্রিটিশরা নিজেরাও বেশিরভাগ অ-খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা স্বীকার করে নেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্রিটিশরা বলেন যে, তারা ‘নিশ্চিত নন’ ঠিক কীভাবে ইহুদি (৫০.৮%) এবং শিখ (৬২.৭%) ধর্মগ্রন্থ শেখানো হয়’। ‘তবে ইসলামের ক্ষেত্রে রায় দিতে তারা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী বোধ করেন, এবং মাত্র ৪০.৭% ইসলাম নিয়ে তাদের অনিশ্চিত জ্ঞানের কথা স্বীকার করেছেন। এর কারণ ব্রিটিশরা ভুলভাবে ধারণা করে যে, ইসলাম ‘সম্পূর্ণ’ আক্ষরিক’ একটি ধর্ম। ওই গবেষণার লেখক এবং ব্রিটিশ মুসলমানদের নিয়ে গবেষণাকারী ডক্টর স্টিফেন জোনস আরব নিউজকে বলেন, এই যে ব্রিটিশরা ইসলাম সম্পর্কে কম জানে কিন্তু তা নিয়ে নেতিবাচক রায় দিতে বেশি ইচ্ছুক এই বিষয়টি থেকেই অপরের প্রতি ‘বিদ্বেষ কীভাবে কাজ করে তা বোঝা যায়’।

‘আমরা বিদ্বেষকে সাধারণত অজ্ঞতাপ্রসূত বলে মনে করি, কিন্তু তা অতিসরলীকরণ। আসলে বিদ্বেষ হল এক ধরনের অপশিক্ষা; এই দেশের অনেক লোক মনে করে যে তারা জানে ইসলাম কী, এবং মুসলমানরা কী বিশ্বাস করে, অথচ অন্য কোনো অ-খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে তারা এভাবে ভাবে না’। এতে আরও বলা হয়, ‘সরকার এবং অন্যান্য গণ ব্যক্তিত্বদের উচিত বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করা এবং ইসলামভীতি উস্কে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে নিরপেক্ষ সমালোচনা বাড়ানো’। গবেষণা প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হল যখন নুসরাত ঘানি নামে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রাক্তন এক মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন যে, ‘মুসলিম পরিচয়’ এর কারণেই তার মন্ত্রী পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধেও এর আগে ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছিল। তিনি একবার নেকাবপরা নারীদের ‘লেটারবক্স’-এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। বর্ণবাদ এবং বৈষম্যবিরোধী প্রচারক শায়েস্তা আজিজ আরব নিউজকে বলেছেন, ‘ইসলামভীতি মুসলিম বিরোধী বর্ণবাদ এবং এটি যুক্তরাজ্যের সমাজে গভীরভাবে শেকড় গেড়ে বসে আছে। কিন্তু রাজনীতি, মিডিয়া এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সকল ক্ষেত্রে একে বর্ণবাদের একটি রূপ হিসাবে অস্বীকার করা অব্যাহত রয়েছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘এই গবেষণা প্রতিবেদনটি থেকেই আবারও জোরলোভাবে প্রমাণিত হয় যে, সমাজে ইসলামভীতি কতটা শেকড় গেড়ে বসে আছে এবং কীভাবে ক্ষমতায় থাকা লোকেরা এই বর্ণবাদের বিষয়টি অস্বীকার করছেন’। ‘ইসলামভীতি বর্ণবাদের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য রূপগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত, অস্বীকারকৃত এবং এর বিরুদ্ধে খুব কমই চ্যালেঞ্জ করা হয়’।

 

আপনার মতামত লিখুন :