ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে জোলিকে অনুসরণ করলেন বাঙালি তরুণী

প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০২০

যৌবনের আগে জীবন। তাই জীবনই যদি না থাকে, তাহলে যৌবন দিয়ে কী হবে? এই চিন্তাভাবনা থেকে অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে স্তন ও ডিম্বাশয় ফেলে দিয়েছেন ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুরের মৌসুমী রায়। তার এ সাহসী সিদ্ধান্তে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ঘটনার শুরু জানুয়ারির শেষের দিকে। মৌসুমীর ডানদিকের স্তনে একটা ফুসকুড়ির মতো দেখা দেয়। ক্রমশ তা টিউমারের আকার নিতে থাকে। এতে চিন্তিত হয়ে পড়েন তিনি। কারণ খুব ছোটবেলায় স্তন ক্যানসারে মাকে হারিয়েছেন।

এখন একই পরিণতি যদি তারও হয়, তাহলে তার সন্তানের কী হবে। এই চিন্তা খেকে স্তন বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ক্যানসারের আশঙ্কা থেকে হাসপাতাল থেকে অস্ত্রোপচার করে তার স্তন থেকে টিউমারটি বাদ দেয়া হয়। তবে তাতেও আশঙ্কার শেষ নেই। ভবিষ্যতে ওই জায়গা থেকে ফের স্তন ক্যানসার হতেও পারে। অদূর ভবিষ্যতে আবার স্তন ক্যানসার হতে পারে কি-না তা জানতে একটি টেস্ট করান মৌসুমী। এই টেস্টের নাম বিআরসিএ জিন টেস্ট। এ টেস্ট করিয়েছিলেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনাও। এই টেস্ট করিয়েই ক্যানসারের পূর্বাভাস পান তিনি।

মৌসুমীর বিআরসিএ জিন টেস্টে দেয়া যায়, তার ফের স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার কথায়, ‘অ্যাঞ্জেলিনা জলির বিষয়টি আমি জানতাম। ক্যানসারের সম্ভাবনা সমূলে নির্মূল করতে নিজের ডিম্বাশয়, ফ্যালোপিয়ান টিউব বাদ দিয়েছিলেন নায়িকা। কিন্তু সে অস্ত্রোপচার এ দেশে যে হয় তা জানতাম না। সার্জন শুভঙ্কর বলেন, এই অস্ত্রোপচার অ্যাপোলোতেই (ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতাল) হয়। পুরো বিষয়টিতে আমার স্বামী সবসময় আমার পাশে ছিলেন।’

এরপর জোলির মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হননি মৌসুমী। হলিউডের শীর্ষ নায়িকাদের অন্যতম অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ক্যানসার এড়াতে শুধু স্তন নয়, বাদ দিয়ে দিয়েছেন নিজের ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব। স্তন ক্যানসার ঘটাতে পারে এমন জিন (বিআরসিএ-১) খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তার শরীরে। একইভাবে মৌসুমীর শরীরেও এই জিন পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত জোলির পথ বেছে নিয়ে খুশি মৌসুমী। সাত বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে তার। মৌসুমীর কথায়, ‘আমি চলে গেলে ওর কী হবে? আমার বেঁচে থাকার লড়াই ওর দিকে তাকিয়ে।’

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে এইভাবে আগাম ডিম্বাশয় কেটে বাদ দেয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে কলকাতাতেও। কিন্তু স্তন ক্যানসারে কেন ডিম্বাশয় বাদ দিতে হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে কলকাতার চিকিৎসকদের দাবি, স্তন ক্যানসারের জন্য ‘ইস্ট্রোজেন’ হরমোন দায়ী। ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে স্তন ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ে। সেই ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের উৎস ডিম্বাশয় দুটি কেটে বাদ দিলেই ঝুঁকিমুক্ত হওয়া যায়। তবে ক্যানসার প্রতিরোধে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর তা নিয়ে চিকিৎকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

কলকাতার বেশ কয়েকজন ক্যানসার চিকিৎসক বলছেন, উফারেক্টমি করে দুটি ডিম্বাশয় বাদ দিলে নারীদের স্তন ক্যানসারের (বিশেষ করে যাদের শরীরে বিআরসিএ-১ বা ২ জিন রয়েছে) সম্ভাবনা অনেক কমানো যায়। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, কলকাতায় গত এক বছরে অন্তত ৯ জন নারী উফারেক্টমি করেছেন। ভারতের শহরাঞ্চলে নারীরা যত ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে স্তন ক্যানসারের হার সবচেয়ে বেশি। পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবছর নতুন করে ১৪ হাজার নারীর দেহে এই ক্যানসার পাওয়া যাচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন :