কুড়িগ্রামে সাংবাদিক গ্রেফতারের প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রকাশিত : ১৪ মার্চ ২০২০

কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে ঘরের দরজা ভেঙে বাংলাট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে (৩৮) বের করে বেধড়ক মারপিটের পর এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের দাবি, ওই সাংবাদিকের ঘরে হাফ বোতল মদ ও একশ গ্রাম গাঁজা পেয়েছেন। তবে, সাংবাদিকের পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, আরিফ কোনো প্রকার নেশা করেন না। মাদক তো দূরের কথা, পান, বিড়ি-সিগারেটও খান না তিনি। কুড়িগ্রামের একটি পুকুরের নাম ডিসি সুলতানা পারভীনের নামে নামকরণ ও নিয়োগ বাণিজ্যের নিউজ করায় আগে থেকেই সাংবাদিক আরিফের ওপর রেগে ছিলেন ডিসি।

সেই রাগ মেটাতেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তিনি। এলাকাবাসী অভিযুক্ত ডিসির শাস্তি দাবি করেছেন।শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিনগত মধ্যরাতে রিন্টু কুমার চাকমা, নাজিম উদ্দীন এবং এসএম রাহাতুল ইসলাম এই ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটসহ টাক্সফোর্স সদস্যরা জেলা সদরের কৃষ্ণপুর চরুয়াপাড়া এলাকার বাড়িতে গিয়ে আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তার কাছে ৪৫০ মিলিলিটার দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে এক বছর কারাদণ্ড দেন। ওই রাতেই তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের স্ত্রী তাসমিন সরদার নিতু ও বোন রেজিকা বেগম রেজি জানান, রিগ্যান আড়াই বছর থেকে চিলমারী বিএম কারিগরি কলেজে কম্পিউটার বিভাগে প্রভাষক হিসেবে চাকরি করছেন। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনে কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।

এ অবস্থায় শুক্রবার রাতে খাওয়া শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়ার সময় হঠাৎ করে কিছু ব্যক্তি বাড়ি ঘেরা দেয়া টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। এ সময় ভয় পেয়ে রিগ্যান মোবাইল ফোনে স্বজনদের বিষয়টি জানায়। এরই এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে এবং রিগ্যানকে মারধর করতে থাকেন তারা। এতে বাধা দিতে গেলে তারা রিগ্যানের স্ত্রীকেও মারতে উদ্যত হয়। তারপর তারা রিগ্যানকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে কয়েকজন পোশাক ও অস্ত্রধারী ছিলেন। পরে তারা জানতে পারেন রিগ্যানকে ডিসি অফিসে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তারা আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে জেলা প্রশাসককে জড়িয়ে বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদ প্রকাশ এবং নিয়োগ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশাসনের লোকজন তাকে এভাবে তুলে নিয়ে গেছে। তারা রিগ্যানের মুক্তি এবং এ ঘটনার ন্যায় বিচার দাবি করেন। স্ত্রী তাসমিন সরদার নিতু বলেন, নিউজ করা নিয়ে আরিফের বিরুদ্ধে ডিসির রাগ, ক্ষোভ ছিল। মূলত সেটা মেটাতেই ডিসি সুলতানা পারভীন তার লোকজন দিয়ে মধ্যরাতে দরজা ভেঙে তাকে ধরে নিয়ে গেছে। নেওয়ার সময় মারতে মারতে বলেছে, তুই খুব জ্বালাইছিস।এদিকে আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে কারাদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদসহ তার মুক্তি দাবিতে শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের সামনে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কে মানববন্ধন করেছেন জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব, দৈনিক কুড়িগ্রাম খবরের সম্পাদক এসএম ছানালাল বকসী, সাংবাদিক শ্যামল ভৌমিক, রাজু মোস্তাফিজ, হুমায়ুন কবির সূর্য, আশরাফুল হক রুবেল এবং জেলা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুলাল বোস প্রমুখ।এদিকে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেয়ে এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করেছে বিভাগীয় প্রশাসন।

আপনার মতামত লিখুন :