পাটুরিয়ায় পদ্মা যা ঘটেছিল সেই ফেরিতে জানালেন দুই যাত্রী

প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর ২০২১

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় পদ্মা নদীতে কাত হয়ে পড়া ফেরি শাহ আমানত ঘাটে ভেড়ার আগেই পানি উঠতে শুরু করেছিলেন বলে জানিয়েছেন বেঁচে যাওয়া দুই যাত্রী। কেন ফেরিটি ঘাটে এসে উল্টে গেল তা এখননো স্পষ্ট না হলেও সেই মুহূর্তের পরিস্থিতি উঠে এসেছে তাদের বর্ণনায়।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে বুধবার সকাল ৯টার কিছুক্ষণ পর পাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয় রো রো ফেরি শাহ আমানত। পদ্মা নদী পার হয়ে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পর পরই সেটি কাত হয়ে যায়। পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসি বলছে- ফেরিটিতে ১৭টি ট্রাক ছাড়াও কয়েকটি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার ছিল। ঘাটে ভেড়ার পর কয়েকটি গাড়ি নামতে পারলেও বাকিগুলো ফেরির সঙ্গেই ডুবে যায়।

ঘাটের কাছে কাত হয়ে অর্ধেক নিমজ্জিত অবস্থায় থাকা ফেরি শাহ আমানতকে তুলতে উদ্ধারকারী নৌযান হামজা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। ভেতরে কেউ আটকা পড়ে থাকলে তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। তবে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

অমল ভট্টাচার্য্য নামে যশোরের মনিরামপুরের এক ব্যক্তি সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে ফরিদপুর থেকে দৌলতদিয়ায় এসে ফেরি শাহ আমানতে উঠেছিলেন নদী পার হওয়ার জন্য।ফেরি উল্টে যাওয়ার সময় তিনি কোনোক্রমে উদ্ধার পেলেও মোটরসাইকেলটি হারিয়েছেন। ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ফেরিতে বেশিরভাগ ছিল ট্রাক আর কাভার্ডভ্যান। আমরা মোটরসাইকেল নিয়ে ছিলাম ৫-৭জন। ফেরি ঘাটের কাছে আসার পর শ্রমিকরা চিৎকার শুরু করে যে- ফেরিতে পানি ঢুকছে, পানি ঢুকছে।

তখন নিজেও ফেরিতে পানি উঠতে দেখেন জানিয়ে অমল বলেন, আমি তাকিয়ে দেখি আস্তে আস্তে ফেরিটা ডান দিকে কাত হচ্ছে। আমরা চিন্তা করছি ফেরি কখন দাঁড়াবে। কিন্তু যখনই দাঁড়াতে গেছে, তখন আরো কাত হয়ে গেছে। ফেরি ঘাটে ভেড়ার পর দুইটা গাড়ি সম্ভবত পার হয়েছে। আমার সামনে একটা মোটর সাইকেল ছিল। আমি দেখলাম সেই মোটরসাইকেল অলরেডি ট্রাকের নিচে চলে গেছে। চালক কোনোমতে গিয়ে পার হয়ে চলে আসেন। আমি মোটরসাইকেল ছেড়ে দিতেই ডুবে গেল। আমিও ডুবে যাই। পরে জুতা খুলে সাঁতার কেটে একটা কাভার্ডভ্যানের উপরে উঠি। এরপর কেউ একজন আমাকে একটা দড়ি দেয়। কিন্তু দড়ি ধরে পার হতে পারিনি। পরে একটা চেইন ঝুলতে দেখে সেটা ধরে পার হই। শেষদিকে ৫-৭ জন যাত্রী আমাকে টেনে পারে তোলে।

সুজন হোসেন নামে আরেক যাত্রী জানান, তার বাড়ি যশোর সদরে। তিনিও মোটরসাইকেল নিয়ে দৌলতদিয়া থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। ঘাটে পৌঁছানোর আগে আগে ফেরিতে পানি উঠতে শুরু করে জানিয়ে সুজন বলেন, ফেরি ঘাটে লাগার পর কয়েকটা পিকআপ নেমে যায়। কিন্তু আমার মোটরসাইকেলটা নদীতে পড়ে যায়। আমি লাফ দিয়ে সাঁতরে তীরে উঠি।

শিবালয় থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেছেন, ফেরির নিচে যে ডাম্প (ফাঁকা অংশ) থাকে, সেখানে ফুটো হয়ে পানি ঢোকায় নৌযানটি উল্টো যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি হবে বলে জানিয়েছেন মানিকগঞ্জের ডিসি মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ।

আপনার মতামত লিখুন :