বরই চাষে ভাগ্যবদল মফিজের (ভিডিও)

প্রকাশিত : ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

দ্বীপজেলা ভোলায় যে বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষাবাদ হতে পারে সেটি প্রমাণ করেছেন মাইনুদ্দিন হাওলাদার মফিজ। ভোলা জেলায় তার হাত ধরেই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ হচ্ছে। সাধারণত জেলার প্রতি বাড়িতে ২-১টি টক বা মিষ্টি জাতের বরইগাছ দেখা যায়। ফল ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে বরই এনে চাহিদা পূরণ করতেন। মফিজ বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ করে সফল হওয়ায় তাকে দেখে অনেকেই বরইবাগান গড়ছেন। ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাগান থেকে বরই কিনে চাহিদা মেটাতে পারছেন।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কাচিয়া ইউনিয়নের দুই নাম্বার ওয়ার্ডে সাড়ে চার একর জমিতে মফিজ বরইবাগান গড়ে তুলেছেন। গাছগুলো চার থেকে সাড়ে চার ফুট উচ্চতার। গাছভর্তি আপেলের মতো লাল বরই দেখলে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে। বিভিন্ন এলাকার লোক তার বরইবাগান দেখতে আসছেন। অনেককেই ক্যামেরাবন্দি করছেন। মফিজ তার বাগানে বেশিরভাগ বলসুন্দরী জাতের বরই চাষ করেছেন। এ ছাড়া কাশ্মীরি জাতের বরইও পরীক্ষামূলক চাষ করেছেন। বরইগাছের চারা সংগ্রহ করেছেন নাটোর থেকে। চারা লাগানোর ২২-২৩ মাসের মধ্যেই ফুল এসেছে। এখন ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন।

এ বরই দেখতে যেমন সুন্দর ও খেতেও সুস্বাধু। বাজারে চাহিদাও প্রচুর। এ পর্যন্ত তিন লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। ৩০ ফাল্গুন পর্যন্ত ২২-২৩ লাখ টাকা বিক্রি নামবে বলে মফিজ জানান। তবে একটি কীটনাশক কোম্পানির পরামর্শে ফুল আসার সময় ওষুধ দেওয়ায় গাছের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হলে বিক্রি আরও কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা বেশি হতো বলে দাবি করেন মফিজ। স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ বরই বিক্রি করছেন ২ হাজার ৪০০ টাকা করে।

পড়াশোনায় মফিজ এসএসসির গণ্ডি পেরোতে পারেননি। মফিজ বলেন, আমি নতুন কিছু করতে পছন্দ করি। সেই সঙ্গে চ্যালেঞ্জও। কৃষিকাজের প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে। বরইবাগান ছাড়াও থাই পেয়ারা, মাল্টাবাগান, সবজি বাগানে প্রায় দুই কোটি টাকার মতো আমার বিনিয়োগ। দীর্ঘদিনের সঞ্চয়, পৌরসভায় দুই এলাকার জমি বিক্রির টাকা, এলাকায় জমি বিক্রি করে কৃষির দিকে ঝুঁকি। এ পরিমাণ টাকা দিয়ে আমি পছন্দসই ব্যবসা করতে পারতাম। কিন্তু ওই দিকে আমার মন টানে না। এ নিয়ে কিছুটা পারিবারিক মনোমালিন্যও হয়েছে। এ কাজে আমি আনন্দ পাই।

মফিজ আরও জানান, বছর দুই আগে আমি উত্তরবঙ্গের নাটোর জেলায় যাই। সব কিছু জেনেশুনে নাটোর থেকে বলসুন্দরী জাতের বরই চারা নিয়ে আসি। এ বরইয়ের বৈশিষ্ট হলো— এটি দেখতে আপেলের মতো। যথেষ্ট পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এ ছাড়া এ জাতের বরইয়ের বিচি অনেক ছোট। বরই বাগানের জমি লিজে নেওয়া। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০-১১ লাখ টাকা। ক্ষেতে রাসায়নিক ও জৈব সার দুটোই প্রযোগ করা হয়েছে। এ বছর পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। তবে পাখি, বাদুড় মিলে লাখখানেক টাকার বরই খেয়ে ফেলে।

এ বছর প্রথম সিজন হওয়ায় খরচ একটু বেশি হয়েছে। আগামী বছর খরচ কম হবে। কারণ বরই চারা কিনতে হবে না। সেচব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো খরচ আর হচ্ছে বলেও জানান তিনি। মফিজের মতে, কৃষিতে যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে লোকসান হওয়ার কথা নয়। তার স্বপ্ন কৃষির পাশাপাশি গরু, ছাগল আর ভেড়ার একটি আধুনিক ফার্ম করার। তবে এটার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, কৃষি অফিস মফিজকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। তাকে জৈব ও রাসায়নিক সার সরবরাহের পাশাপাশি সেচের জন্য বরই ক্ষেতে ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেকার যুবকদের জন্য মফিজের কাজ একটি অনন্য উদাহরণ বলেও জানান তিনি। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুর রহমান বলেন, মফিজের মতো উদ্যোক্তাদের সাধ্যমতো সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :