বঙ্গবন্ধুর মতোই বঙ্গমাতাও চির অমর: বেগম মতিয়া চৌধুরী

প্রকাশিত : ৮ আগস্ট ২০২২

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না। কিন্তু তিনি জীবনের পাঠাশালায় তৈরি হয়েছেন। সময় তাকে তৈরি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার জীবন ছিলো ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধু যেমন চির অমর ঠিক তেমনি বঙ্গমাতাও চির অমর বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে আওয়ামী লীগের দলীয় সভা নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ফলমূল, শাকসবজি ও মাশকালাইর বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সোমবার (৮ আগস্ট) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির আয়োজনে বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যেককে দেখতেন নিজ পরিবারের সদস্যের মতো। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরাও তাই মনে করতেন। নেতা-কর্মীদের বিপদ-আপদে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা তাদের পাশে দাঁড়াতেন পরম হিতৈষীর মতো। মমতা মাখানো সাংগঠনিক প্রয়াস নিয়ে কর্মীদের হৃদয় জয় করে নেয়ার ব্যতিক্রমী যে ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর ছিল, সেই চেতনার আলোয় আলোকিত ছিলেন বঙ্গমাতা।

তিনি বলেন, আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে এই মহিয়াসী নারী আড়ালে থেকে যেতেন। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে আসলেন তখন একান্তে বঙ্গবন্ধুকে তিনি বলেছিলেন যে, তোমার কিছু হয়ে গেলে আমাদের কী হতো? স্বভাবসুলভ এই নারী তার আকুতি কখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি। তিনি কোনো অনুযোগ করে বঙ্গবন্ধুকে নিবৃত্ত করেননি।

বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুকে কাছে পেয়েছেন খুবই কম সময়। কিন্তু যখন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ৯২-ক ধারা জারি করে তখন সকল নেতাকর্মী গৃহবন্দী হয়ে যায়। তখন বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে সেবা যত্ন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এ ছাড়া আর তেমন সুযোগ হয়নি। তিনি তখন তার ছেলে মেয়েদের বলেছিলেন, যে এই সময়টুকু না হলে তোমাদের বাবার সঙ্গে আবার নিবিড় সময় কাটানো হতো না।

তিনি বলেন, আমরা নেত্রীর কাছ থেকে শুনেছি যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামিদের যখন বিচার শুরু হলো। তখন বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব নিয়ে কিছু নেতাকর্মী বাসায় আসেন। কিন্তু বঙ্গমাতা এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন দৃঢ় কণ্ঠে। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেউ কেউ দুর্বল করতে বলেছিলেন তুমি কেমন মেয়ে যে, বাবাকে মুক্তি করতে চাও না! তখন নেত্রী বলেছিলেন যে, আমার বাবাকে মুক্ত করতে চাই কিন্তু প্যারোলে নয়। মাথা উঁচু করে তার মুক্তি চাই।

তিনি আরো বলেন, এই মহিয়সী নারী শুধু বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীই ছিলেন না, পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক অবস্থা তাকে পরিচালিত করেছে। সেই অর্থে তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিয়েও প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনায় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময়ে সবাই এসে চাপ প্রয়োগ করে একজন বলেছিলেন যে, তোমরা কেমন যে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাও না। তখন বেগম মুজিব বলেছিলেন, বিধবা হলে আমি হবো। আপনারা শুধু আমার কথা ভাবছেন! অন্যদের কথা ভাবছেন না কেনো? বঙ্গবন্ধুর সাথে যারা আটক আছেন তারা মারা গেলে তাদের বউরা বিধবা হবে না? আপনারা আমাকে ভয় দেখান কেনো।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, তার তো কোনো প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, কিন্তু তিনি জীবনের পাঠাশালায় তৈরি হয়েছেন এবং সময় তাকে তৈরি করেছেন। ১৫ আগস্টে যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে তখন তিনিও দাঁড়িয়ে বলেছিলেন আমাকেও মেরে ফেলো। সোজা কথা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার জীবন ছিলো ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধু যেমন চির অমর তেমনি বেগম মুজিবও চির অমর। আমরা বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি বেগম মুজিবের নামও অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বলব।

এই আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, আগস্টের শোকের আবহের মধ্যেই আমরা বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী পালন করছি। জন্মবার্ষিকীর যে আবহাওয়া বা উদ্দীপনা থাকার কথা তা কিন্তু এই শোকের মাসে আমাদের কারো মধ্যেই নাই।

তিনি বলেন, দিন যত যাচ্ছে সত্য আরো কঠিনভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকলের কর্মকান্ড উজ্জল হয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। সকল নারীদের প্রেরণার উৎস বঙ্গমাতা।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহউদ্দিনের সভাপতিত্বে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সদস্য সচিব বাবু সুজিত রায় নন্দীর সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের যগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ আব্দুল আউয়াল মহিউদ্দিন।

আপনার মতামত লিখুন :