ফেনীর সেই নুসরাত হত্যার এক বছর আজ

প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০২০

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির প্রয়াণের একবছর আজ। গত বছরের ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে হল থেকে ডেকে পাশের ভবনের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা যৌন হয়রানির মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হয় তাকে। রাজি না হওয়ায় গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাতকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে আসা হয় ঢাকা। চার দিন লড়াইয়ের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে নুসরাত।

এদিকে, নুসরাত হত্যার পর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দ্রুতই বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। নুসরাত হত্যায় জড়িত ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের চাওয়া, এই শাস্তি যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। নুসরাতের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকর আগের দিন বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) তার বাসায় গিয়ে দেখা যায় সুনসান নিরবতা। নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় তিন জন পুলিশ রয়েছেন বাড়ি পাহারায়। পরিবারের সবচেয়ে ‍উচ্ছ্বল সদস্যটিকে হারানো এই পরিবার এখনো তার স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই বেঁচে রয়েছে।

নুসরাতের মা এখনো মেয়ের কথা মনে করে দিনরাত কান্না করেন। মেয়ের টেবিলে মাথা রেখে তার স্পর্শ খোঁজেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, মেয়েটার কথা কিভাবে ভুলি! মেয়েটাকে জীবিত অবস্থায় গায়ে আগুন দিয়ে তাকে পুড়িয়ে মেরেছে খুনিরা। কত নির্মম তারা। তাদের ফাঁসির দণ্ড দ্রুত কার্যকর করা হোক। নুসরাত হত্যা মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। উচ্চ আদালতেও আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশী। আশা করি দ্রুত রায় কার্যকর হবে।

নোমান জানান, খুনিরা ও তাদের স্বজনরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের এখনো হুমকি দিয়ে চলেছে। সে কারণেই এখনো পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। নুসরাতের শরীরে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তার ভাই বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলা দয়ের করেছিলেন। পরে নুসরাত মারা গেলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। মামলায় ২৮ মে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। মামলাটিতে মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক গ্রহণ করা হয়। ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ।

পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে একলাখ টাকা করে জরিমানাও করেন তিনি। ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছায়। অগ্রাধিকারভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানোও শেষ করা হয়েছিল। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, অগ্রাধিকারভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি কেটে গেলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে মামলাটির শুনানি হবে।

নুসরাত হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ১৬ আসামি হলেন :

সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

 

আপনার মতামত লিখুন :