বাংলা একাডেমির বইমেলায় ‘ইসকন’ প্রচার!

প্রকাশিত : ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলা একাডেমির বইমেলায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর নামে স্টল বরাদ্দ দেয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। দেশের ওলামা-মশায়েখদের অনেকেই প্রাণের বই মেলায় ইসকন প্রচারের তীব্র প্রতিবাদ করে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন ইসকন প্রচারে কি বাংলা একাডেমি ভূমিকা রাখছে? ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে বাংলা একাডেমির বইমেলায় ১২ বছর ধরে স্টল বরাদ্দ দিয়ে ইসকন প্রচারণার রহস্য কি। কেউ কেউ অবশ্য প্রশ্ন তুলে বলেছেন, জনগণের ট্রাক্সের অর্থে পরিচালিত বাংলা একাডেমির কাজ বাংলা ভাষার সমৃদ্ধ, গবেষণা, প্রচারণা; ইসকন প্রচার নয়। অথচ ইসকনকে স্টল বরাদ্দ দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তারা ইসকনের স্টল বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ইসকনকে বাংলা একাডেমির বই মেলায় স্টল বরাদ্ধ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসকন ইয়ুথ ফোরামের সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি অংশে স্টলে গেলে বিক্রয়কর্মীরা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ইয়ুথ ফোরামের সদস্যরা পালা করে স্টলে বিক্রয়ের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি অংশের ৭৪ নাম্বার স্টল বরাদ্ধ পেয়েছে সংস্থাটি। এ বছর যেখানে তারা স্টল পেয়েছে গত বছরও তার পাশেই স্টল ছিলো বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা। মেলার বাংলা একাডেমির অংশটিতে সাধারণত জাতীয়, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্টল বরাদ্ধ দিতে দেখা যায়। এ স্টলে সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রন্থের পাশাপাশি ইসকন আন্দোলন নিয়ে রচিত বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বই বিক্রি করা হচ্ছে। এখান থেকে সব ধর্মের মানুষেরা ইসকনী মতাদর্শী বই কিনে থাকে।

ইসকনের ২০১৯ সালের নতুন প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে এবার মেলায় এসেছে অভ্রান্ত বৈদিক শাস্ত্রের আলোকে কল্কি অবতার বিষয়ক গ্রন্থ ‘কল্কি অবতার’ ও শ্রীল শচীনন্দন স্বামী রচিত ‘হরিনামামৃতসিন্ধ’ু। ইসকনের বিভিন্ন বই বাংলা ভাষার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় রয়েছে। তবে বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর সহজ পাঠ্যের জন্য বাংলা একাডেমির মেলায় তারা শুধু বাংলা ভাষার বইগুলো রাখছেন বলে জানিয়েছেন ইসকন ইয়ুথ ফোরামের সদস্য বিক্রয়কর্মী শুধাভক্ত শ্রীধর দাস।

স্টলটিতে পালা করে প্রতিদিন দুজন করে দায়িত্ব পালন করলেও ইসকনের অন্যান্য বিক্রয়কর্মীরা হলেন সাধু কৃপাময় দাস, শুধাভক্ত শ্রীধর দাস, সুন্দরকান্তি ঘোর দাস, নীতাই চারণ কৃপা দাস, শুভাত্মা চৈতণ্য দাস, সুকারু মাধু সুধন দাস, পাতিতুতধারায়ন জগন্নাথ দাস, জয় মহাপ্রভূ দাস, উজ্জল বিস্মমভারা দাস, আছুতা আদভাতয়্যা দাস, প্রেমময়ী নিমাই দাস ও সনজিত দাস। তারা ইসকনের স্বামীবাগ আশ্রম সংশ্লিষ্ট। ইসকন ইয়ুথ ফোরামের সদস্য ও বিক্রয়কর্মী প্রেমময়ী নিমাই দাস বলেন, শুধু এ বছর নয় ২০০৮ সাল থেকে ইসকন বই মেলায় স্টল দিচ্ছে। গত বছর এই জায়গার একটু আগে (ডানপাশে) আমাদের স্টল ছিলো।

এদিকে গোঁড়াপন্থী সনাতন ধর্মীয় সংগঠন ইসকন অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি অংশে স্টল বরাদ্ধ পেলেও বিভিন্ন সময়ে নানা অযুহাতে ইসলাম ধর্ম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্ধ দেওয়া হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপরীতে নাস্তিকদের তোলা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বের হয় তরুণ লেখক আরিফ আজাদ রচিত প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-২ নামের ইসলাম ধর্ম বিষয়ক একটি বই। সে বছরের মেলায় ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি প্রকাশ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ৮ হাজার কপির বেশি বিক্রি হয় বইটি। এছাড়াও অনলাইনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় উপরে চলে আসে এ বই। এরপর ইসলামবিদ্বেষীদের পরিচালিত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও এক্যাউন্ট থেকে মেলায় বইটি নিষিদ্ধ করার দাবি আসতে থাকে। প্রকাশের কয়েকদিন পরেই বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ মেলায় বইটি বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেয় বলে ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সংবাদ প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা। বিক্রি বন্ধের কারণ হিসেবে বইটিতে প্রকাশনী অফিসের হোল্ডিং নম্বর নেই বলে জানানো হয়।

জানা যায়, অমর একুশে বইমেলায় চার শতাধিক প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিলেও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত বই প্রকাশ করে এমন প্রকাশনীর সংখ্যা নগন্য। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বিশ্বকল্যাণ পাবলিকেশন ও বইঘরছাড়া অন্য কোন অভিজাত ইসলামী প্রকাশনীর স্টল মেলায় চোখে পড়ে না। ব্যাপক পাঠক চাহিদা থাকা স্বত্বেও রকমারির ডাটা মতে বাংলাদেশের অধিক বিক্রির তালিকায় ২ নাম্বারে থাকা ‘সমাকলীন’ ও ৪ নাম্বারে থাকা ‘গার্ডিয়ান’ প্রকাশনী স্টল বরাদ্ধ পায় না বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে। যদিও এ অভিযোগের সতত্য যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনীর সাথে কথা বলা ইনকিলাবের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

বিশেষজ্ঞমহল বলছেন, বাংলাদেশের আপামর জনতার কাছে একুশের বইমেলা অন্য রকম এক ভালোবাসার নাম হলেও বইমেলা সব মতদর্শী বইপ্রেমীদের আকাঙ্খা মেটাতে পারেনা। তারা বলছেন আগে মেলায় নামী সাহিত্যিকসহ সব রকমের লেখক, প্রকাশকদের ঢল নামলেও এ আভিজাত্য ক্ষীণ হয়ে এসেছে। একাডেমির নীতির কারণেই একুশের বইমেলায় দিন দিন কমে আসছে বহুমতের চর্চার সুযোগ। ফলে দেশের ইসলামপ্রেমি বড় একটি অংশকে বাঙালী জাতির এ মহা আয়োজন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

বইমেলা নিয়ে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের নীতি কি তা স্পষ্ট নয় আপামর জনতার কাছে। তারা বলছেন বইমেলাকে অসাম্প্রদায়িক রাখতে যদি ইসলামী প্রকাশনীগুলোকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে হিন্দু ধর্মীয় গোঁড়াপন্থী সংগঠন ইসকন কিভাবে বইমেলার বাংলা একাডেমি অংশে ২০০৮ সাল থেকে স্টল বরাদ্ধ পেয়ে আসছে সেটা প্রশ্ন বটে? -দৈনিক ইনকিলাব

আপনার মতামত লিখুন :