অসুস্থ স্বামীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার কথা বলে গৃহবধূকে ধর্ষণ: ২ জন রিমান্ডে

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

অসুস্থ স্বামীর জন্য রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে এক নারী ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত ধর্ষক মনোয়ার হোসেন সজীব (৪৩) ও তার সহযোগী মাশনু আরা বেগম শিল্পীর (৪০) দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী শুনানি এ আদেশ দেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রোববার মিরপুর থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সুষ্ঠু তদন্তে প্রয়োজন সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করেন। এসময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত শুক্রবার রাত ৮টায় রাজধানীর মিরপুরে মনিপুরীপাড়ায় শিফা ভিলা নামের একটি ফ্ল্যাট থেকে র‌্যাব ২-এর একটি বিশেষ দল দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে র‍্যাব ২-এর কমান্ডিং অফিসার (সিপিসি-২) মেজর এম এম পারভেজ আরেফিন বলেন, আসামি মনোয়ার হোসেন সজীবের মা ও অভিযোগকারী গৃহবধূর স্বামী সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামীর জন্য ও পজিটিভ রক্ত প্রয়োজন বলে চিকিৎসক জানিয়ে দেন। পরে রক্তের সন্ধানে গৃহবধূ হাসপাতালটির নিচ তলার ব্ল্যাড ব্যাংকে যান। সেখানেই বসে ছিলেন ধর্ষক সজীব।

র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, ব্ল্যাড ব্যাংকে রক্ত না থাকায় সজীব তখন ওই গৃহবধূকে মালিবাগের কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে যেতে বলেন। কিন্তু গৃহবধূ মালিবাগ চিনেন না বলে সজীবকে জানান। পরে সজীব তাকে জানান, ‘আমি তোমাকে মালিবাগে ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে নিয়ে যাব।’ সেই কথা মতো সকালে তারা দুজন রওনা দেন মালিবাগের কোয়ান্টামে। কিন্তু সেখানে রক্ত না থাকায় কোয়ান্টাম থেকে জানানো হয়, টাকা রেখে যেতে। টাকা দিলে পরেরদিন রক্ত পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়।

মেজর এম এম পারভেজ আরেফিন জানান, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে রক্তের প্রয়োজনের কারণে গৃহবধূ কোয়ান্টামে টাকা জমা না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। পরে তারা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রওনা দেন। রওনা দিয়ে পরে তারা ফার্মগেট পর্যন্ত আসেন। সেখানে আসার পর মনোয়ার হোসাইন সজীব ওই গৃহবধূকে বলেন, মিরপুরের মনিপুরে আমার এক বোন আছেন। সেখানে গেলে রক্তের ব্যবস্থা হতে পারে। পরে তারা দুজনই মনিপুরে যান। সে সময় সজীব তাকে একটি বাসায় উঠতে বলেন। কিন্তু গৃহবধূ রাজি হচ্ছিলেন না। পরে গৃহবধূকে জোর করে অপর আসামি শিল্পীর বাসায় ওঠানো হয়।

এরপর শিল্পী তাদের নাস্তা খাওয়ানোর কথা রান্নাঘরের দিকে যান। সে সময় সজীব ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন এবং গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পর তিনি যাতে এই ঘটনা কাউকে না বলেন সেজন্য মেরে ফেলার হুমকি দেন। পরে তারা হাসপাতালে চলে যান। গৃহবধূর স্বামী অধিক অসুস্থ হওয়ায় এই ঘটনা তিনি কাউকে জানাননি। পরে অন্যভাবে রক্ত ম্যানেজ করেন ওই গৃহবধূ। কিন্তু পুনরায় রক্তের প্রয়োজন হয়। এই ঘটনা সজীব জানতে পারেন। পরবর্তী সময়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সজীব পুনরায় রক্ত ম্যানেজ করে দেওয়ার কথা জানান ওই গৃহবধূকে। পরে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনা তার স্বামীকে জানিয়ে দেন। এরপরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর তার স্বামী র‍্যাবের কাছে অভিযোগ করেন। ওই দিন রাতে মনিপুরে ওই বোনের বাড়ি থেকে সজীব ও তার বোনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গ্রেপ্তারের পর পুরো ঘটনা স্বীকার করেছেন সজীব।

 

আপনার মতামত লিখুন :