নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে

প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর ২০২০

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কিছু মানুষ আওয়াজ তুললেও বেশিরভাগ মানুষ এই আন্দোলনে যুক্ত হন না। এ ব্যাপারে সবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পুরুষ ও কিশোরদের সংবেদনশীল আচরণ জরুরী। বরিশালে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নগরের রিভারভিউ রেস্টুরেন্টের হলরুমে অনুুষ্ঠিত নারী ও শিশুর প্রতি জেন্ডার ভিত্তিক নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষ ও কিশোরদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সুরক্ষা কমিটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় নারী ও শিশুর প্রতি সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। ব্র্যাক জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির এনগেজ মেন এন্ড বয়েজ নেটওয়ার্ক ফর প্রোমোটিং জেন্ডার জাস্টিস বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় প্রতীকি যুব সংসদের আয়োজনে ওই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এসএম ইকবালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. জাকির হোসেন মজুমদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিশু সংগঠক ও সাবেক জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা পংকজ রায় চৌধুরী, বরিশাল বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ।

সভায় বক্তারা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। নারী ও শিশুরা সমাজে নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বর্তমান করোনা মহামারীর সময় নারী ও শিশুরা বাড়িতে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই সময় মানুষের পশুবৃত্তির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড আইন পাশ হলেও ধর্ষণ কিংবা নারী শিশু নির্যাতন কমেনি। মূলত আইন দিয়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন পারিবারিক মূল্যবোধ। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হলে আগে পরিবার থেকে ভূমিকা নিতে হবে। নারী ও শিশুকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। এজন্য মানুষের মধ্যে দৃঢ় প্রত্যয় ধারণ করতে হবে। আর সেই কাজে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে পুরুষ ও কিশোরদের। নারী-পুরুষ সমানভাবে এগিয়ে যেতে হলে একজন অন্যজনের সহযোগী হতেই হবে।

প্রতীকি যুব সংসদের নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, উন্নয়ন সংগঠক আনোয়ার জাহিদ, রণজিত দত্ত, শিশু সংগঠক শুভংকর চক্রবর্তী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক স্বপন খন্দকার, সুশান্ত ঘোষ, সাইফুর রহমান মিরণ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি মো. আক্তার হোসেন, ওয়ার্ল্ড ভিশনের ফিল্ড অ্যাডভোকেসি এন্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটি কো-অর্ডিনেটর সুরভী বিশ^াস, ব্রাক জেলা প্রতিনিধি বিভাস চন্দ্র তরফদার, সেক্টর স্পেশালিস্ট্ (কমিউনিকেশন) দৃষ্টি তন্ময়, ডিভিশনাল ম্যানেজার মো: সেলিম মোল্লা, প্রতীকি যুব সংসদের চেয়ারপার্সন আমিনুল ইসলাম (ফিরোজ মোস্তফা) প্রমুখ।

এসময় বক্তারা বলেন, নারী ও শিশুরা ঘরে বাইরে প্রতিনিয়ত যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তারা বেশি নির্যাতনের শিকার হয় ঘরের ভেতর নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে। এমন সব স্বজন দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তা মুখ খুলে বলতেও পারে না। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হলে পারিবারিকভাবে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। এর সঙ্গে নীরবতা ভেঙে আওয়াজ তুলতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এব্যাপারে শুন্য সহনশীল নীতি অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

অপরদিকে বিকেল সাড়ে ৩ টায় প্রতীকি যুব সংসদের আয়োজনে অসচ্ছল কিশোরীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়। জেন্ডার ভিত্তিক ন্যায় বিচারের প্রচার: পুরুষ এবং ছেলেদের সংযুক্তিকরণ নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশের নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা হ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় ব্র্যাক’র সহযোগিতায় করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংকটকালীন সময়ে নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক পাভেল তৌহিদুজ্জামান।

বিতরণকালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে.এম জাহাঙ্গীর, সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন শেষে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে দুইশত পঞ্চাশ প্যাকেট সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

আপনার মতামত লিখুন :