বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব সিওপিডি দিবস উদযাপিত

প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০২০

শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমানারি ডিজিজ বিশ্ব সিওপিডি দিবস ২০২০ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় একটি জনসচেতনতামূলক সংক্ষিপ্ত র‌্যালীর আয়োজন, বেলুন উড়ানো, ডা. মিল্টন হলে একটি আলোচনাসভা ও বৈজ্ঞানিক সেশনসহ আয়োজনের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি উদযাপিত হয়েছে। আজ বুধবার ১৮ নভেম্বর ২০২০ইং তারিখ সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসির সম্মানিত অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ  জাহিদ হোসেন। সভাপতিত্ব  করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ ও বক্ষব্যাধি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। বৈজ্ঞানিক সেশনে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, কার্ডিওলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোঃ হারিসুল হক, বক্ষব্যাধি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন। গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বক্ষব্যধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজাশিস চক্রবর্তী। এসকল অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, বক্ষব্যধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বক্ষব্যধি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলোÑভালোভাবে বাঁচি সিওপিডিতে, সবখানে, সবসময় (খরারহম বিষষ রিঃয ঈঙচউ ঊাবৎুনড়ফু, ঊাবৎুযিবৎব). প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই মহামারীর সময়ে বিশ্ব সিওপিডি দিবস পালন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুখে মাস্ক পড়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের তা অবশ্যই মেনে চলা উচিত। তিনি বলেন, ধুমপান পরিহার ও দুষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে বক্ষব্যধি বিভাগের উন্নয়নে সব ধরণের সহায়তা করা হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসির সম্মানিত অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকা, বায়ুদুষণ প্রতিরোধ করাসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সিওপিডি একবার হয়ে গেলে সহজে নিরাময় হয় না, তাই প্রতিরোধেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সম্মানিত উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান বলেন, সিওপিডি প্রতিরোধে এন্টি টোবাকো ক্যাম্পেইন জোরদার করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সম্মানিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম তাঁর বক্তব্যে সিওপিডি উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সম্মানিত উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ  জাহিদ হোসেন বলেন, সিওপিডি প্রতিরোধের জন্য সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে বায়ুদুষণ সর্বনি¤œ পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, করোনা মহামারী রোগটির আবির্ভাবে প্রমাণিত হয়েছে রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে কতবেশী গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তার বক্তব্যে সিওপিডি ও করেনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য বক্ষব্যধি বিভাগের আরো উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন,  ধুমপান না করা, কলকারখানা ধোঁয়াসহ সকল ধরণের ধোঁয়া থেকে দূরে থাকা, তামাক চাষ বন্ধ করা এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে সিওপিডিও রোগ অনেকটাই বিনাস করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী তামাক মুক্ত দেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ ও বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আরো জানান, শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ সিওপিডি ধূমপায়ীদের বেশি হতে দেখা যায়। এটা ফুসফুসের একটা অসুখ যাতে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সিওপিডি-র ফলে কাশি দেখা দেয়, সেই সঙ্গে কফ, নিঃশ্বাসে সাঁ সাঁ শব্দসহ নানা উপসর্গ থাকে। ধূমপানের সঙ্গে এই অসুখটি যুক্ত। যাদের এটা হয়, তাঁদের অনেকেই ধূমপান করেন বা এককালে করতেন। এছাড়া বাতাসের দূষণ, ধুলো, ধোয়া, ইত্যাদি যা আমাদের ফুসফুসে প্রদাহের সৃষ্টি করে তাদের জন্যেও এই রোগটি দেখা দিতে পারে। ২০০২ সাল থেকে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দিবসটি প্রতিপালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে সিওপিডি (ঈঙচউ) রোগীর সংখ্যা ৮০ মিলিয়ন। এক পরিসংখ্যান মতে, ২০০৫ সালে তিন মিলিয়ন লোক এই রোগে রোগে মারা গেছেন। ২০০২ সালে সেখানে সিওপিডি রোগ মৃত্যুর ৫ম কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল, নিকট ভবিষ্যতে তা ৩য় মৃত্যুরর কারণ হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগরীতে বক্ষব্যাধি বিভাগ, বিএসএমএমইউ কর্তৃক পরিচালিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখানকার ৩৫ বছরের উর্ধ্বের জনসংখ্যার ১১.৪ ভাগ সিওপিডি রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ১১.৭ ভাগ পুরুষ এবং ১০.৬ ভাগ মহিলা। সিওপিডি রোগ প্রতিরোধে তামাকের চাষ ও উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। সিগারেট ও তামাক কোম্পানীগুলো বন্ধ হলে হ্রাস পাবে সিওপিডি-তে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ও অনেকটাই কমে আসবে। কারণ ধূমপান ও তামাজাত দ্রব্য সেবনের কারণে শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ধূপপান পরিহার ও পরিবেশ দূষণ রোধের মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। বর্তমানে মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে-এটাও প্রতিরোধ করতে হবে। ছবি: মোঃ আরিফ খান। নিউজ: প্রশান্ত মজুমদার।

 

আপনার মতামত লিখুন :