জিয়া পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে গুলি চালিয়েছে এমন নজির নেই: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট ২০২১

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনো গুলি চালিয়েছে এ রকম নজির নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে হত্যার নেপথ্য ক্রীড়নকসহ হত্যা ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির গোড়াপত্তকারী হিসেবে জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করে বলেন, ’৭৫ এর পর যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা, কু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেখানে দলেরও যেমন বেইমান, মোনাফেক, মীরজাফর ছিল, খন্দকার মোশতাক গং আর তাদের শক্তিটা ছিল জিয়াউর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার করার কথা উল্লেখ করে বলেন, খালেদ মোশাররফ আহত হয়ে গেল এবং জিয়াকে সেক্টর কমান্ডার করা হয়েছিল। কিন্তু সে কখনো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালিয়েছে এ রকম কিন্তু কোনো নজির নাই। এ রকম কোনো নজির কেউ দেখাতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক-রশিদের দম্ভভরে বিবিসিতে প্রদত্ত স্বেচ্ছায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কর্নেল ফারুক-রশিদ বিবিসিতে যে ইন্টারভিউ দিয়েছিল সে ইন্টারভিউতেও তারা স্বীকার করেছে, শুধু তাই নয়, অনেক পত্র-প্রত্রিকাতেও তাদের বক্তব্য এসেছে-জিয়াউর রহমান এই খুনিদের সঙ্গে সব সময় ছিল। এই জিয়াউর রহমানই ছিল মূল শক্তির উৎস এবং সেই বেইমানিটা করেছিল। অথচ এই জিয়াকে মেজর থেকে জাতির পিতাই মেজর জেনারেল করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মেধাবী ছাত্রদের অস্ত্র, মাদক ও অর্থ তুলে দিয়ে বিপথে নিয়ে গেছে জিয়াউর রহমান। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে হুমকি দিয়েছিল, আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে তার ছাত্রদলই যথেষ্ট। তিনিও ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা কোনো কাজ অধরা রেখে যাননি। সব কাজের ভিত্তি তিনি প্রস্তুত করে গেছেন। যখনই এই পরাজিত শক্তি দেখল আর বাংলাদেশকে বাধা দিয়ে রাখা যাবে না তখনই কিন্তু ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটিয়েছিল তারা।

তিনি বলেন, সেই কথা মনে রেখেই কিন্তু আমাদের পথ চলতে হবে যে আমাদের পায়ে-পায়ে শত্রু আছে, পদে পদে বাধা আছে, আমাদের চলার পথ মসৃণ না, কণ্টকাকীর্ণ। আমাদের চড়াই-উতরাই পার হয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মাত্র ১২ বছরের মধ্যে আজকে বাংলাদেশ উঠে দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এখনো যুদ্ধাপরাধী, পরাজিত শক্তি এবং পনেরই আগস্টের খুনি, ফাঁসি যাদের হয়েছে তারা তো বটেই, তাদের ছেলেপেলে যারা এবং যুদ্ধাপরাধী‑ যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদেরও ছেলেপেলে, দোসর বা বংশধর তারা এখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে, ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। যে সকল আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতা করেছিল, তাদের কিছু কিছু এদের মদদ দিয়ে থাকে। কাজেই এই ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে‑ পদে পদে সতর্ক থাকতে হবে।

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় যারা স্থানীয় দালালচক্র, যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর‑ তারা কোনো দিন চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। তারপরও যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, বিজয় অর্জন করল, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত হলো- তখন সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ১৫ আগস্ট এই হত্যাকাণ্ড তারা চালিয়েছিল। এরপর বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামটা সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছিল।

তিনি বলেন, জয় বাংলা স্লোগান‑ যে স্লোগান দিয়ে লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছে, সেই স্লোগান নিষিদ্ধ করল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছিল। ভাবখানা এমন হয়েছিল যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। আবার সেই পাকিস্তানের একটা প্রদেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন সৃষ্ট এবং সেই পাকিস্তান এসে আবার আমাদের ওপর খবরদারি করবে‑ অনেকের এমন আকাঙ্ক্ষা ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশে ১৫ আগস্টের যে হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে। এরপরে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। এ ছাড়া বহুবার আমার ওপরে হামলা। এমন কী চুয়াত্তর সালে কামালের ওপর হামলা হলো। তাকেও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হলো। যখন দেখল সে বেঁচে গেছে তখন তার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হলো। মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হলো। অর্থাৎ যারা পরাজিত শক্তি তারা সব সময় সক্রিয় ছিল।

ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।

আপনার মতামত লিখুন :