মাদক মামলায় পরীমনির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল

প্রকাশিত : ৪ অক্টোবর ২০২১

রাজধানীর বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক কাজী মোস্তফা কামাল এ চার্জশিট দাখিল করেন। অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন- আশরাফুল ইসলাম দিপু ও কবির চৌধুরী।

গত ৪ আগস্ট অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। অভিযানে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয়। তার ড্রয়িংরুমের কাভার্ড, শোকেস, ডাইনিংরুম, বেডরুমের সাইড টেবিল ও টয়লেট থেকে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল উদ্ধার করা হয়। তার পরদিন গত ৫ আগস্ট র‍্যাব বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় পরীমনি ও তার সহযোগী বিপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলায় দায়ের করেন। ওইদিন পরীমনি ও তার সহযোগীর চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় গত ১০ আগস্ট পরীমনি ও তার সহযোগী দিপুর দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ১৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষে পরীমনি ও তার সহযোগী দিপুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। গত ১৬ আগস্ট পরীমনিকে ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরপর গত ১৯ আগস্ট আদালত তার জামিন আবেদন খারিজ করে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ২১ আগস্ট তৃতীয় দফার রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর গত ৩১ আগস্ট পরীমনির আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান আদালতে জামিন শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি (পিঁপিঁ) আব্দুল্লাহ আবু জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আগ পর্যন্ত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

এরপর গত ১৫ সেপ্টেম্বর পরীমনির জব্দ হওয়া জিনিসপত্র চেয়ে আদালতে আবেদন করেন তার আইনজীবী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে বিআরটিএ থেকে গাড়ির সঠিক মালিকানা যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি দুইটি জব্দ তালিকার মোট ১৬টি আলামত পরীমনিকে দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি পরীমনিকে তার জব্দকৃত আলামত দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে তদন্তে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর পরীমনির জিম্মায় ১৬ টি আলামত বুঝিয়ে দিতে তার আইনজীবী আদালতে আবেদন করেন। এরপর আদালত আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে সিআইডির দেয়া প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে আদালত হ্যারিয়ার গাড়ির সমমূল্যের মুচলেকায় পরীমনির জব্দকৃত ১৬টি আলামত বুঝিয়ে দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ১৬টি জব্দ করা আলামত হলো- একটি হ্যারিয়ার গাড়ি, দুইটি ল্যাপটপ, তিনটি আইফোন, একটি আইপেট, মেমরি কার্ড একটি, পেনড্রাইব একটি, টেলিটক মডেম একটি, মাই স্টাইক একটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ভিসা কার্ড একটি, ব্র্যাক ব্যাংকের গোল্ড কার্ড একটি, ব্র্যাক ব্যাংকের ভিসা কার্ড একটি ও দুইটি পাসপোর্ট।

মামলার সূত্রে জানা যায়, পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদক সেবন করতেন। এমনকি ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন তিনি। এজন্য বাসায় একটি মিনি বার তৈরি করেন। তিনি বাসায় নিয়মিত মদের পার্টি করতেন। আর চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করত এবং পার্টিতে অংশ নিতো। পরীমনি ২০১৪ সালে সিনেমা জগতে আসেন। এ পর্যন্ত ৩০টি সিনেমা ও ৫/৭টি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। প্রযোজক রাজ তাকে পিরোজপুর থেকে ঢাকায় সিনেমা জগতে নিয়ে আসে।

আপনার মতামত লিখুন :