কোভিড-১৯ : মানবতার সেবায় ০৫/০৭ এর সাবেক শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০২০

কোভিড-১৯, নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সাড়া বিশ্ব থমকে গেছে, থমকে গেছে বাংলাদেশ। নানা অজানা আশঙ্কা, খবর, সমালোচনা, অনাস্থা, গুজব, সামাজিক মাধ্যমে কাঁদা ছোড়াছুড়ি যেন ভাইরাসের চেয়েও বেশী পেয়ে বসেছে আমাদের। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সারাবিশ্বের, সকল দেশ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সকলের একটিই কথা সবচেয়ে বড় করণীয় “বাসায় থাকুন, সংক্রমণ কমান।“ এতে স্থবির হয়ে পড়েছে কর্মচঞ্চলতা, থমকে গেছে দেশ, অসহায় হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। পর্যাপ্ত উপকরণের অভাবে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে চিকিৎসা ও আইন প্রয়োগকারী ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্টরা রয়েছে আশঙ্কা ও বিপদজনক অবস্থায়।

তাই দেশ থমকে গেলেও থমকে যায় নি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ এস,এস,সি ২০০৫ এইচ,এস,সি ২০০৭ এর ৪৬০০০ বন্ধুরা যারা ছড়িয়ে আছে পুরো বিশ্বে। We For Us প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই জরূরী অবস্থায় তাদের পাশে দাড়ানোর জন্য ডাব্লিও,এইচ,ও এবং সরকারের বাসায় থাকার আদেশের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে অনলাইনে যোগাযোগ করে অল্প কিছু স্বেচ্ছাসেবকের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে মাত্র ১ দিনে নিজেদের মধ্যে থেকে অর্থ জোগাড় করে প্রস্তুত করেছে ৫০০০ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এ পুরো কাজের তত্তাবধানে ছিলেন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মাসি এ্যালামনাই এ্যাসসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সোহেল বিন আজাদ। বিনামূল্যে বিতরণের জন্য এসব পৌঁছে দেয়া হবে ঢাকার ৫ টি অঞ্চলে ও বিভাগীয় শহর গুলোতে।

স্যানিটাইজার প্রস্তুত করার থেকে বিতরণ এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করছে গ্রুপের বাবলু, বিজয়, মুশফিক, কামরুল, খান, খাইরুল, ইমাম, শিপু, রিজন, রিমন, সাইফুল, মুন্না, জিন্নাত,মোঃ রুমান অমি সেন। সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছে তুষার ভদ্র, আবিদ, আফজাল রোমান,মেহেদি, জিসান, মাহমুদুল, যোসেফা ও নিগার অপু। তাদের সাথে কথা হলে সোহেল বলেন “আমাদের গ্রুপের সদস্য রয়েছে পৃথিবীর প্রায় ২০০টি শহরে। আমাদের প্রধান ইচ্ছা দেশের এই পরিস্থিতিতে আমরা গ্রুপের মাধ্যমে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমাদের বন্ধু ও দেশের কল্যানে কাজ করব। সে লক্ষে প্রথম ধাপে আমরা মাস্ক, স্যানিটাইজার ও পিপিই প্রস্তুত করছি যা পৌছে যাবে এই যুদ্ধে সম্মুখে যারা কাজ করছে সেই সকল মানুষগুলোর কাছে। এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার আমরা চিকিৎসক, নার্স, মাঠে নিয়োজিত সংবাদ কর্মী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে পৌঁছে দিব, ইতোমধ্যে মতিঝিল থানা, কাফরুল থানা, তেজগাঁও, কিছু এতিম খানা, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী( সমশের নগর স্টেশন) ও কাওরানবাজারে আমরা কিছু বিতরণ করেছি। এছাড়া এর পরেই আমরা সকলের সহায়তায় বিনামূল্যে পিপিই পৌছে দিতে চাই হাসপাতালে কর্মরত যোদ্ধাদের হাতে। প্রায় ১০০০ পিপিই ও ২০০০০ মাস্ক তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও ছিন্নমূল মানুষদের নিরাপদে থাকার জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে সাথে রেখে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যাবস্থা করছি।” সে লক্ষে প্রায় ১৫টি জেনারেল হাসপাতাল ও মাঠ পর্যায়ে গিয়ে গিয়ে পৌঁছে দেয়া হবে এগুলো বললেন তুষার ভদ্র। এই আয়োজনের সকল খরচ মাত্র অল্প কিছু মেম্বার নিজে সতস্ফূর্তভাবে বহন করছে। এই সবকিছুই গ্রুপের কেন্দ্রীয় প্রোগ্রাম “করোনা ইমার্জেন্সি রেসপন্স প্রোগ্রাম ০৫০৭(সি,ই,আর,পি-০৫০৭)” এর অধীনে চালু রয়েছে।

এই প্রোগ্রামের আওতায় গ্রুপের বন্ধু ও বন্ধুদের পরিবারের জন্য গ্রুপেরই ডাক্তার/নার্সদের সহায়তায় রয়েছে ইমার্জেন্সি ম্যাডিকেল এ্যাসিস্টেন্স প্রোগ্রাম যা হট-লাইন ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সাহায্য করতে প্রস্তুত গ্রুপে আক্রান্ত পরিবারকে। তাছাড়া রয়েছে লক-ডাউন ও কোয়ারেন্ডিন এ্যাসিস্টেন্স প্রোগ্রাম এবং খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেয়ার প্রোগ্রাম। ঢাকার ৭ টি স্থানে ও বিভাগীয় পর্যায়ে থাকবে সিইআরপি সেন্টার যেখান থেকে এই পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হবে, প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হবে ও চিকিৎসকের সাহায্যে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হবে।

তাছাড়া বাসায় বসে সমাজের জন্য কাজ করাকে উৎসাহ যোগাতে তারা প্রত্যেকেই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী ছোট ছোট কাজ করছে নিজের পরিবার, পাশের দুস্থ মানুষ, নিজ এলাকার মানুষের জন্য এবং সেই গল্প শেয়ার করছে গ্রুপে। এই ব্যাপারে গ্রুপের আরেকজন এ্যাডমিন, ইয়ুথ ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক জিসান মাহমুদের সাথে কথা হওয়ায় সে বলে “ আমাদের মাঝে যারা সচ্ছল তাদের মতকরে দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী বাসায় বসে থাকতে পারবে না। তাই আমাদের এই উদ্যোগ। আমরা চাই আমাদের ৪৬০০০ সদস্য একটি করে দুস্থ পরিবারের ১৪ দিন, ৭,দিন বা ১ দিন বাসায় বসে থাকার ব্যবস্থা করে দিক, ছোট্ট কিছু কাজ করুক সমাজের জন্য বাসায় বসেই। তাই আমাদের এই আয়োজন। গুজব আতঙ্ক বা তাজা খবর নয় আমরা কি করছি সমাজের জন্য তাই হোক আমাদের গল্প।

আপনার মতামত লিখুন :