“মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক”– মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন

প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতিই উন্নতি লাভ করতে পারে না। শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদন্ড তাহলে শিক্ষকরা সে মেরুদন্ডের স্রষ্টা। গোটা মানব সমাজের মধ্যে নৈতিক বিচারে শিক্ষকদের চেয়ে সম্মানিত্এবং শিক্ষকতার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা আর নেই। একজন শিশু তার মা-বাবার স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়। মা-বাবা শিশু সন্তানকে তার লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য তার জানা বা অজানাকে প্রাধান্য না দিয়েই জোর চাপিয়ে দেন। একজন শিশু মূলত মা-বাবার চেয়ে তার শ্রেণী শিক্ষককেই বেশি অনুধাবন করে থাকেন। আসলে একজন শিশুর মানসিক বিকাশ মা-বাবার পাশাপাশি সহপাঠি ও সর্বোপরি শিক্ষক দ্বারাই বেশি হয়ে থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাই একজন মানুষের আজীবনের ভিত্তি তৈরি করে থাকে। তাই প্রাথমিক প্রয়োজন মানসম্মত ও যোগ্য শিক্ষকের। তাহলেই একটি শিশুর ভিত্তি মজবুত হবে। পাশিপাশি মানসম্মত শিক্ষকের শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজন শিক্ষা উপকরণ। মানসম্মত শিক্ষা আমাদের সকলের মৌলিক ও মানবিক অধিকার। শিক্ষকরা হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের আলোক বর্তিকা। বর্তমান সরকারের মাননয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করতে অঙ্গীকার করেছেন। এর সুফল আমরা পেতেও শুরু করেছি। বর্তমান প্রজন্মের শিশুরাও প্রযুক্তি নির্ভর।

তাই প্রত্যেক শিক্ষকের আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকেও শিক্ষকদের জন্য প্রযুক্তির উপর যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ শিশুদের পুঁথিগত জ্ঞানে সীমাবদ্ধ না রেখে শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ও ব্যবহারিক কাজে মনোনিবেশ করাতে হবে। মনে রাখতে হবে যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। তাই একটি দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে শিক্ষার বিকল্প নেই। আর এই শিক্ষার জন্য প্রয়োজন শিক্ষক নামের কারিগর। একজন শিক্ষককে সবসময় মনে রাখতে হবে শিক্ষাদানের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের সাথে তার সুসম্পর্কের কথা। শিক্ষক শিক্ষার্থীর মাঝে সুসম্পর্ক তৈরি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার পরিবেশ ও সেতুবন্ধন সুদৃঢ় হবে না। মূলত এটিই হলো শিক্ষার প্রথম ধাপ। একজন শিক্ষক যতই মেধাবী হোক না কেন, তার পাঠদান পদ্ধতি এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীর মাঝে সেতুবন্ধন যতক্ষণ না হবে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার বিষয়টি তার অনুক‚লে কখনই আসবে না। শ্রেণী কক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রধান অনুপ্রেরণা হল তাদের প্রিয় শিক্ষক। আর সেই প্রিয় শিক্ষকই পারে তার ¯েœহ মমতা আর সুশাসনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। শিক্ষার মূল লক্ষ্য জ্ঞান অর্জন ও বিকাশ। একজন শিক্ষককে শিক্ষাদানের সময় মনে রাখতে হবে, শিক্ষার জ্ঞান বিকাশের পরিবর্তে যেন সংকুচিত হয়ে না যায়।

বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। এ অর্জন ধরে রাখতে হলে যোগ্য শিক্ষক তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর মেরুদন্ড সোজা রাখতে হলে যোগ্য শিক্ষকের অধিকার দিতে হবে। শিক্ষককে অধিকার বঞ্চিত করে শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়ন করা যাবে না। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষকদের মান সম্মত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন শিক্ষককে দক্ষ করে তুলতে হবে।

সামাজিক মর্যাদা কাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে শিক্ষকদেরকে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের জাতীয় বেতনভ‚ক্ত করেছেন এবং ৫% প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতা প্রদান করার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা করেছেন। পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি করে মেধাসম্পন্নদের শিক্ষকতা পেশায় আসার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় অত্যন্ত সাফল্য অর্জন করেছেন। নারী শিক্ষার প্রসার, শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষানীতি প্রণয়ন, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারের অর্জন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের বিশাল অর্জন থাকলেও শিক্ষা ও শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য আজও বিদ্যমান। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের সাথে সুযোগ সুবিধার বৈষম্য বিদ্যমান। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য। সরকারি প্রাথমিকের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যেও রয়েছে বেতন বৈষম্য। সর্বশেষ একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলেও আজও তা বাস্তবায়নকরা সম্ভব হয়নি। শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা হলে হয়তো শিক্ষাক্ষেত্রে স্থায়ী সাফল্য আসতে পারে।

একজন দক্ষ শিক্ষক প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদান করতে পারবে না। মানসম্মত শিক্ষা শিশুসহ আমাদের সকলের মৌলিক ও মানবিক অধিকার। তাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিভিন্ন পেশার মানুষ ও সরকারের মধ্যে ঐক্য গড়া মধ্য দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকরা সমাজ ও রাষ্ট্রের আলোকবর্তিকার মতো কাজ করবে। তবে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষক্রম, পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য শিক্ষক প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষাদান সামগ্রী ও ভৌত অবকাঠামো, যথার্থ শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি, কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও তত্ত¡াবধান এবং গবেষণা ও উন্নয়নের স্বীকৃতি, শিক্ষা উপযোগী কর্মপরিবেশ সর্বোপরি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণসহ সম্মানজনক বেতন, পেনশন ও সামাজিক প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। আর তখনই শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য আনতে সক্ষম হবে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক।

“মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক”
—– মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রধান শিক্ষক
বাড্ডা বালিক উচ্চ বিদ্যালয়।

 

আপনার মতামত লিখুন :