রাস্তার পাশে পতিত জমিতে সবজি চাষে লাভবান কৃষক


প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সঞ্জয় ব্যানার্জী, দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।। পটুয়াখালীর দশমিনায় রাস্তার দু’পাশের পতিত জমিতে শাক-সবজি চাষ করে বাড়তি আয় করছেন কৃষকরা। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও রাস্তার দু’পাশের মাটির ক্ষয়রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে অভিনব এ চাষাবাদ পদ্ধতি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠী, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাস্তার ধারে সবজি চাষের জন্য উপজেলার ৬০জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ,সার ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও দুই শতাধিক কৃষককে এ বিষয়ে উদ্ধুদ্ধকরণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কগুলোর উভয় পাশে প্রায় ২০কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি চাষ করা হয়েছে। জায়গাগুলো অপেক্ষাকৃত উঁচু ও ঢাল থাকায় বর্ষাকালেও জমতে পারেনা বৃষ্টির পানি। ফলে শীতকালীন শাক সবজির আগাম ফলন বাড়ছে উপজেলায়। অসময়ে এসব শাক সবজির ফলন হওয়ায় ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীণ সড়কের উভয় পাশের পতিত জায়গায় বিভিন্ন মৌসুমী শাক-সবজী চাষ করেছেন কৃষকরা। এতে উপজেলার কয়েকশ কৃষক পরিবার স্বল্প খরচে বাড়তি আয়ের পথ পেয়েছেন।

এদিকে, চলতি আমন চাষের মৌসুমে পুরুষ কৃষকরা সারাদিন ক্ষেতে ব্যস্ত থাকায় এসব সবজি বাগানের বেশিরভাগেরই পরিচর্যা করছেন স্থানীয় নারীরা। এতে ওই নারীদের নিজ সংসারের গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে বিকল্প কর্মসংস্থানের। বাড়তি আয়ের পাশাপাশি কৃষিতে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে ওঠছেন তারা।
একজনকে অনুসরণ করে আরেকজন আগ্রহী হওয়ার ধারাবাহিকতায় দিন দিন উপজেলায় বাড়ছে এ ধরনের চাষাবাদ। নিজস্ব আবাদী জমি ছাড়া অল্প শ্রম ও ব্যয়ে এ পদ্ধতির চাষাবাদে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট শাক সবজি বিক্রি করে প্রচুর টাকা আয় করছেন অনেকে। ফলে সমৃদ্ধ হচ্ছে উপজেলার কৃষি অর্থনীতি।

উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের বড়গোপালদী গ্রামের কৃষক মো. শাহজাদা জানান, রাস্তার পাশের জমিতে এত ফলন হবে ভাবতে পারিনি। কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সার বীজ সহায়তা পেয়ে বর্ষাকালে রাস্তার পাশের উঁচু পতিত জমিতে লাউ ও চিচিঙ্গা চাষ করেছি। অসময়ে ভালো ফলন হওয়ায় দামও ভালো পেয়েছি। চাষাবাদে আমার পঁচিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছিলো। প্রায় এক লক্ষ টাকার লাউ ও চিচিঙ্গা বিক্রি করেছি। আরও প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকার বিক্রি করতে পারবো। কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছেন। অনেকেই ভবিষ্যতে এ পদ্ধতির চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের কৃষক বাদল চন্দ্র মজুমদার জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সার বীজ সহায়তা পেয়ে তিন মাস আগে তিনি রাস্তার পাশের পতিত জমিতে মাত্র আট হাজার টাকা খরচ করে বরবটি ও লাউ চাষ করেছিলেন। ভালো ফলন হওয়ায় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন তিনি। বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের গছানী গ্রামের আউয়াল বলেন, অসময়ে রাস্তার পাশে পতিত জমিতে অনেক কম খরচে লাউ, বেগুন, ঝিঙ্গা চাষ করে আমার পঁচিশ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বেশি জায়গায় চাষাবাদ করবো।

এবিষয়ে দশমিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাফর আহমেদ বলেন, রাস্তার পাশে পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উৎপাদন করে কৃষকদের নতুন পদ্ধতির দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। এসব পতিত জমি কৃষির আওতায় আনলে কৃষকরা যেমন নিরাপদ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবেন তেমনি আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন।

 

আপনার মতামত লিখুন :

এই বিভাগের সর্বশেষ