সরকারী খাস জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে যাচ্ছে প্রশাসন

প্রকাশিত : ২১ জুন ২০২০

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় নারকেলতলা আবাসন সংলগ্ন ক্ষমতাসিন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কয়েক ভুমি দস্যুর বিরুদ্ধে খাসজমি দখল করে মাছের ঘের ও ঘর বাড়ী নির্মান করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।সরকারী খাস জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। সরকারী খাস জমি অসহায় ও ভুমিহীনদের বন্দোবস্ত দেয়ার নিয়োম থাকলেও উপকুলীয় এলাকায় জমিগুলো দখল করে আছে বিত্তবান ও ক্ষমতাসিন প্রভাবশালীরা। উপজেলা ভুমি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ একটি চক্র বছরের পর বছর সরকারি ওই সম্পত্তি জবর দখল করে রেখেছে। প্রভাবশালী এ ভুমি দস্যুদের দাপটে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। তারা জাল দলিল ও ভুয়া কাড়জপত্র তৈরী করে প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ বিঘা সরকারী খাস জমি দখল করে মাছের চাষ করছে। যার ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে অসহায় মানুষগুলো পড়ছে সমস্যায় এবং নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।

খোজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ ভুমি আইনে খাস জমি বন্দোবাস্ত পাওয়ার প্রথম অগ্রাধিকার নিঃস্ব ভুমিহিনদের। অথচ সরকারী খাসজমি ভুমিগ্রাসী বিত্তবান প্রভাবশালী মহল করায়ত্ত করে নিচ্ছে। জোর জবরদস্তি দালাল ও লাঠিয়াল সন্ত্রাসী দিয়ে খাস জমিগুলো দখল করে রাখছে কতিপয় ভুমিগ্রাসীরা। আবু তাহের গং বছরের পর বছর ধরে একরের পর একর সরকারি জমি জোর পূর্বক ভোগ দখল করে আসছে। এ জমিতে বিভিন্ন ঘর বাড়ি স্থাপনা নির্মান সহ মাছের চাষ করে আসছিল। দীর্ঘদিন ওই জমি জবর দখলের বিষয়টি সম্প্রতি স্থানীয়দের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। উপজেলা ভুমি রাজস্ব দপ্তরের সার্ভে দলের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে সরকারি খাসজমি ভোগ দখলের নেপথ্যের রহস্য। আর এর পরই ওই জমি উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে উপজেলা প্রশাসন ।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাদপাই ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও স্বঘোষিত আওয়ামী নেতা আবু তাহের মল্লিক নারকেলতলা আবাসন সংলগ্ন কয়েক বিঘা জমিতে মাছের ঘের করেন। এর মধ্যে পুরো জমিটাই সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। আবু তাহেরের সাথে প্রায় ১৭ বছর যাবত জাল দলিল করে ওই খাসজমি দখল করে মাছের ঘের করেছে প্রভাবশালী ফারুক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ওই জমির পাশ দিয়ে সরকারি রাস্তা থাকলেও মানুষ ওই রা¯াÍ ব্যবহার করতে পারছেন না। মোংলা উপজেলার মাকোরডোন মৌজায় চাদঁপাই ইউনিয়নেই রয়েছে প্রায় এক থেকে দেড়শ একরেরও বেশী খাস জমি। আর এ জমিগুলো এলাকার কয়েকজন ভুমি দস্যু ক্ষমতাশীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে জবর দখল করে রেখেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাছের ঘেরের মধ্যে এখনো ছোট খানা করে মাছ রাখা হয়েছে। খাস জমির ওপর দিয়ে মাছের ঘেরের বেড়ি এবং ঘর বাড়ী তৈরি করা হয়েছে। পাশের জমিতে চাষ করা কৃষকেরা জানান, খাসজমি দখল করে বড়লোকেরা মাছ চাষ করছেন। অথচ গরিব মানুষ ওই জমি ভোগ করতে পারছেন না। প্রতি বছর আবু তাহের মল্লিক ও ফারুক এ জমি থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আয় করছেন। এছাড়া নিজে মাছের চাষ করতে না পারলেও অন্যের কাছে মোটা অংকের টাকা বিনিময় বছর হিসেবে ইজারা প্রদান করছেন তারা। এখানকার ভূমিহীন মানুষেরা ওই ঘেরের বেড়ির ওপর দিয়ে হাঁটলেও তাদের বাধা দেওয়া হয়। এ সময় কৃষক আবদুল হালিম বলেন, গত বছর বর্ষার মৌসুমে তিনি মাঠে ঘাষ কাটতে যাওয়ার সময় বেড়ির ওপর দিয়ে গেলে তাঁকে নিষেধ করা হয় এবং গালমন্দ করে তার ভারাটিয়ারা।

কথা হয় এলাকার আজাহার মীরের সাথে, বছরের ১২ মাসই মাঠে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর কোনো জমি নেই। মাছের ঘেরের মধ্যে সরকারি জমি আমাদের মতো গরিব মানুষের পাওয়ার কথা। কিন্তু দখল করে খাচ্ছে বড়লোকেরা। তিনি ওই জমি ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্তের দাবি জানান। খাসজমি দখলমুক্ত করে উম্মুক্ত করা হলে এখানকার ভুমিহীনরা বিলের ফসল বা মাছ চাষ করে সবাই উপকৃত হবে।

নারকেলতলা আবাসনে বসবাসকারীরা জানায়, খাসজমি ভুমিহীনদের বন্দোবস্ত দিলে আমরা আর অসহায় থাকবো না। ওই সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে এলাকার সাগর খানঁ ও আবাসনের বেশ কয়েকজন মিলে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করে। যার কারনে গত বছর বন্দরে দুর্নীতি দমন কমিশনের গনশুনানিতেও খাস জমি দখলের ঘটনা উল্লেখ করা হয় কিন্তু রহস্য জনক কারনে তা আর আলোর মুখ দেখেনী। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)র কাছেও আবেদন করা হয়েছে। তবে খাসজমি দখল করার বিষয় শুধু আবু তাহের নন, প্রভাবশালী বাবর আলী, হাবিব, স্বরমা, মহিউদ্দিন শেখ, স্বপন, ইলিয়াস, তারিন বাড়ই, উপজেলা ভুমি অফিসের জাহাঙ্গিরসহ প্রায় ১৮ জনের নামে বেনামে সরকারের এ খাস জমি ভুয়া কাগজ পত্র তৈরী করে দখল করে রাখছে। তবে জাল দলিল তৈরী করা আবু তাহের মল্লিক সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তাঁর মাছের ঘেরের মধ্যে ২ বিঘা সরকারি জমি রয়েছে। সেটি খোদেজা বেগমের নিটক থেকে কবলা দলিল করে কিনে নেয়া হয়েছে। সরকার দাবি করলে তিনি ছেড়ে দেবেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রাহাত মান্নান বলেন, সরকারি জমি অনেকে দখল করে আছেন। তালিকা তৈরী করা হচ্ছে, শিগ্রই ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরী করে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ দখল মুক্ত করা হবে সরকারের এ খাস জমি।

আপনার মতামত লিখুন :