সন্তান প্রসব মানেই সিজারিয়ান, শরীয়তপুরে ৭০ভাগ অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান করা হচ্ছে

প্রকাশিত : ৬ জুলাই ২০২০

মোঃ ওমর ফারুক, শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুরে প্রায় ৭০ ভাগ সন্তান প্রসব হচ্ছে সিজারিয়ানে, বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয়! এর মধ্যে বেসরকারি ক্লিনিক স্ব্যাস্থ সেবা গুলোতে এ অপারেশন করে মোটা অংকের বাণিজ্যপথ বেছে নেয় কিছু অসাধু এমবিবিএস ডাক্তার” ও ক্লিনিক মালিকরা। এতে করে শরীয়তপুরের সিজারে অপারেশন করে অর্থনৈতিক চাপে দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা।

৯ মাসের এক গর্ভবতী বন্যা সিকদার আমাদের জানায়,গত ১৮ই জুন রোজ বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি ভেদরগঞ্জ বেসরকারি এক ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে ডাঃ আম্বিয়া আলম কনার কাছে চিকিৎসা নিতে যান। প্রথমে ৩০০ টাকা ভিজিটে রশিদ নিয়ে যায় তার চেম্বারে। দেখা যায় সেখানে অনেক রোগী, ভিড় জমে আছে, অনেকক্ষণ পরে আমাকে ডাকলে আমি গেলে আমাকে বলে আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হবে তখন আমি ৫০০ টাকার একটি রশিদ কিনে আবার আসি।২/৫ মিনিটেই পরিক্ষা করা হয়ে গেলো তার পরেই বলে ভর্তি করেন ডেলিভারির ডেট শেষ। এখন সিজারিয়ান অপারেশন ছাড়া কিছু করার নেই। আমি বলি সমস্যা আমার এখনোতো ডেট আছে ১৯ তারিখ পর্যন্ত, বাবু কি ভালো আছে সে বললো সব ভালো তারপরেও রিস্কি নিয়েন না সমস্যা হতে পারে। ডাক্তার বলেন কেন মেয়ে বাবু হবে তাই সিজার করাবেন না? তার পরে আমি চলে যাই। পরেরদিন ১৯জুন আমার ব্যাথা ওঠে ২০ জুন ১০ টার দিকে আমার বাড়িতেই নরমাল ভাবে ডেলিবারি হয়ে মেয়ে বাবু হয় এখন আমি আল্লাহ রহমতে সুস্থ আছি। এভাবে ডাক্তাররা ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে বিপদে ফেলে দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বেশি অর্থ পান, আর এতে হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোর লাভও হয় বেশি। কারণ, হাসপাতালে রোগী যত বেশিদিন থাকবে ততোদিনই ওষুধ খরচ থেকে শুরু করে,ওয়ার্ড বা কেবিন খরচসহ সব ধরনের খরচও বেশি হবে। স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হলে রোগীকে প্রায় এক সপ্তাহ বা কখনো কখনোও তারও বেশি থাকতে হয়।

আবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিন-২০১৫ তে দেখা যায়, দেশের উপজেলাগুলোতে সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশু জন্ম নেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করা হবে কোন পরিস্থিতিতে। গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষিত ও ধনী মানুষের মধ্যে অস্ত্রোপচারের প্রবণতা বেশি, কিন্তু অস্ত্রোপচার আসলেই প্রয়োজন হলে সেটা ধনী-দরিদ্র শ্রেণি বিভেদ সৃষ্টি করবে না, সবার জন্য তা সমান দরকার। সিজারিয়ানকে বলা হয় জীবনরক্ষাকারী পন্থা-কারণ,প্রি-অ্যাকলামশিয়াসহ আরও কিছু বিষয় যখন একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন সিজারিয়ানের মাধ্যমে মা এবং সন্তানের জীবন রক্ষা করা হয়। এটা ছাড়া আরও কিছু মেডিক্যাল ইন্ডিকেশন রয়েছে যেগুলোর জন্য অপারেশন করতে হয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের বলা আছে, কোন কোন অবস্থায় চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু এর বাইরে অস্ত্রোপচার করা অপ্রয়োজনীয়।

শরীয়তপুরে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে নবজাতকের জন্ম হওয়ার সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এতে কালের বিবর্তনে মানুষ ডাক্তারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। তবে স্থানীয় সাধারণ মানুষ মনে করেন এর থেকে বাচতে হলে আমাদের আল্লাহকে ডাকতে হবে এবং ভরশা রাখতে হবে এবং আমাদের ডাক্তারদের সঠিক পরামর্শ দিতে এবং ভালো হলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য যে পরামর্শ তা জানিয়ে দিতে হবে। আমাদের একটাই অনুরোধ সরকার যেনো স্ব্যাস্থ বিভাগের ডাক্তারদের এ বিষয় ভুমিকা পালন করেন।

এবিষয় শরীয়তপুর স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন ডঃ মোঃ আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, বিষয়টি শুনলাম তবে অপ্রয়োজনে কাউকে সিজার অপারেশন করানো তা কোন মতেই উচিৎ নয়। আমার জানামতে শরীয়তপুরে কোন ডাক্তার এই রকম করতে পারে জানি না তবে আমি মোটেই এইটার পক্ষে না। যদি কোন ডাক্তার রোগীকে অপ্রয়োজনে অপারেশন করতে বলে বা করালে তা ঠিক নয়। আমি সব উপজেলা গুলোর সব ক্লিনিকে খোজ রাখবো ও হাসপাতাল গুলোতে নজর রাখবো।

আপনার মতামত লিখুন :