না ফেরার দেশে চলে গেলেন এডঃ নজরুল ইসলাম

প্রকাশিত : ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

ফরিদ আহমদ শিকদার: সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন হবিগঞ্জ ( কোর্ট)বারের বিজ্ঞ -সিনিয়র আইনজীবী, নবীগঞ্জ উপজেলার ৩ নং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বানিউন গ্রামের শ্রদ্ধাধাভাজন,জননন্দিত ব্যক্তি, সাবেক কৃতি ফুটবলার এডঃ নজরুল ইসলাম (৫৭)।চিকিৎসাধীন অবস্থায় অদ্য ০৬/০৯/২০২০ ইং সকাল ৯টা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।

হঠাৎ করে তার মৃত্যুর সংবাদটি পুরো আদালত পাড়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বিজ্ঞ বিচারক, বিজ্ঞ এডভোকেট, কোর্টগুলোর পেশকার, সেরেস্তাদার, মোহরার, আইনজীবী সমিতির স্টাফ, কোর্টগুলোর স্টাফ, অনেক বিচার প্রার্থী প্রায় সবার মধ্যেই শোক বিরাজ করছে। অনেককে কোর্টের ভেতরেই কাদঁতে দেখা গেছে। করোনা আক্রান্ত হলে প্রথমে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে ভর্তি হন। মুগদা হাসপাতাল থেকে আশংকাজনক অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে স্থানান্তর করা হয়। করোনা আক্রান্ত হওয়ার মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন।

হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে নজরুল ইসলাম নামে বেশ কয়েকজন আইনজীবী রয়েছেন। তিনি ছিলেন দাড়িওয়ালা নজরুল ভাই। সবার কাছে এই নামেই পরিচিত। একজন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত পালনে তার জুড়ি ছিল না। সুন্নতী দাড়ি রাখা, টাকনুর উপরে পেন্ট পড়া, পাচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়ায় এডভোকেট নজরুল ইসলাম ছিলেন সর্বাগ্রে। রাতের প্রথমভাগে তিনি ঘুমাতেন। উঠতেন ফজরের নামাজের আগে। বাসায় তাহাজ্জুত পড়ে ফজর নামাজ পড়তেন মসজিদে গিয়ে। এসব রাসুল (সা) এর অন্যতম সুন্নত ছিল। কোর্টে আসার সময় হালকা খাবার ও পানি নিয়ে আসতেন ব্যাগে করে। বাহিরের কিছু তেমন খেতেন না। এডভোকেট নজরুল ইসলাম খুজে খুজে আত্বীয় বের করতেন। অনেক দুরের আত্বীয় তার কাছে অনেক কাছের, ঘনিষ্ট। আত্বীয়ের হক আদায় করা তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বর্তমান যোগে আত্বীয় স্বজন থেকে দুরে থাকা যেখানে কালচারে পরিনত হয়েছে সেখানে এই একটি সুন্নত পালনে তিনি ছিলেন ব্যতিব্যস্ত। আত্বীয়দের কে কোন জায়গায় কিভাবে আছে তা নিয়মিতই বর্ণনা করতে আমাদের কাছে। সদা হাস্যোজ্জল ও ফুর্তিবাজ মানুষ ছিলেন তিনি। যেখানে যেতেন, বসতেন, সবাইকে একটা আনন্দের মাঝে ডুবিয়ে রাখতেন। ফুল ও আতর ছিল তার কাছে অধিক জনপ্রিয়। বাসা থেকে নিজের লাগানো গাছের বিভিন্ন ফুল সাথে করে কোর্টে নিয়ে আসতেন নজরুল ভাই। ফুলের পাপড়ি বিলাতেন আমাদের মাঝে। মজা করে বলতেন, আমাকে ফুল মিয়াও ডাকতে পারো তোমরা। উন্নত মানের আতর ব্যবহার করতেন তিনি। নিত্যসঙ্গী ছিল আতর। কোর্টে নিয়ে আসতেন।

সহকর্মীরা তার কাছ থেকে আতর পায়নি, এমন সংখ্যা খুব কম। আতর দেয়ার সময় বলতেন, আমাকে আতর আলী ডাকবে না? তিনি ফুল ও আতর ভালবাসতেন এই জন্য যে, রাসুল (সাঃ) ফুল ও আতর ভালবাসতেন। এডভোকেট নজরুল ইসলাম মৃত্যুকালে দুই ছেলে, স্ত্রী সহ অসংখ্য আত্বীয়,গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।মরহুমের প্রথম জানাজা হবিগঞ্জ কোর্ট প্রাঙ্গনে সন্ধা সাতটায় এবং ২য় জানাজা নিজ বাড়িতে রাত ১১ টায় অনুষ্ঠিত হবে, জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

 

আপনার মতামত লিখুন :