দশমিনায় থানায় আসামী আত্মহত্যা বাবার দাবী গেঞ্জি গায়ে লিটন বিষ পেল কোথায়?

প্রকাশিত : ৭ ডিসেম্বর ২০২০

দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: জমিসংক্রান্ত অভিযোগে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বাশঁবাড়িয়া গ্রামের আলাউদ্দিন খানের ছেলে মো: লিটন খানকে রোববার দশমিনা থানার এএসআই মামুন গ্রেফতার করে নিয়ে আসার আধা ঘন্টার মধ্যে বিষ পানে আত্মহত্যাা। নিহত বাবা ও সন্তানদের অভিযোগ ভাত খাওয়া অবস্থায় গেঞ্জি গায়ে লিটনকে থানা পুলিশ নিয়ে গেলে বিষ পেল কোথায়? এ ঘটনায় খান পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ৪ডিসেম্বর সকালে ঢাকায় সিএনজি চালক মো: লিটন খান গ্রামের বাড়ি এসে বাশঁবাড়িয়া রজ্জবিয়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্নে একটি টিনÑকাঠের ঘর নির্মান করেন। ওই রাতে মাদ্রাসা পুকুরে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন করা হয়। এ ঘটনায় মাদরাসার সুপার মাওঃ সিহাব উদ্দিন শনিবার ওই মাদরাসার দায়িত্ব রত সভাপতি ও ইউএনও বরাবরে জমি দখল ও বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনের লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগে লিটনকে সন্দেহ জনক আসামী করা হয়। মাদরাসার সভাপতি ইউএনও তানিয়া ফেরদৌস বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওসি দশমিনাকে নির্দেশ দেন। ওসি এএসআই মামুনকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। রোববার দুপুরে এএসআই মামুন সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে ভাতের টেবিল থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে বলে নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। থানা পুলিশ বিকেল সাড়ে ৪ টায় থানা অভ্যন্তরে লিটন বিষ পান করলে দশমিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন লিটনের অবস্থা বেগতিক দেখে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। লিটনের সাথে থাকা মো: মফিজ মুহুরি জানান, রাত ১টা ১৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিটনের মৃত্যু হয়।

নিহতের বাবা মোঃ আলাউদ্দিন খান জনান, পুত্র বধূ মাসেদা ও তিন নাতি মামুন, রহমান এবং জাবেদকে নিয়ে দুপুরের ভাত খাওয়ার সময় পুলিশ আমার পোলারে (লিটন)কে ধরিয়া লইয়া যায়। হেকালে লিটন গেঞ্জি গায়ে ছিল বিষ পাইলো কই। নিহতের বড় ছেলে আব্দুল আল মামুন নবম শ্রেনীর ছাত্র অভিযোগ করে জানান, তার বাবার এ ঘটনার জন্য মাদরাসা সুপার সিহাব মাওঃ. মফিজ খা ও জয়নাল খা দায়ী তাদের বিচারের দাবী জানাই।

ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখা যায় ওই বাড়ির বসত ঘরের খাবার টেবিলে লিটনের খাবারের মাখা ভাত সেই অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
খাবারর সেই দৃশ্য নিহতের ছেলেরা আল মামুন (১৪), আ: রহমান (১০) ও আল জাবেদ(৯) দাদা আলাউদ্দিন খা ও নানা মতলেব গাজী নিয়ে ওই টেবিলে বসিয়ে স্থাণীয় সংবাদকর্মীদের দেখান। ওই এলাকার ফারুক (৫০), কালু (৬০), আলম (৫০) জানান, শুক্রবার রাতে জয়নাল খার ঘরে পিকনিক পার্টি চলছিল। পিকনিক পার্টির কাউকে এখন এলাকায় দেখা যায়না। ওই পিকনিক অংশগ্রহনকারী দেলোয়ার মৃধার ছেলে ৫ম শ্রেনির ছাত্র আ: রহমান জানান, পল্ট্রি মুরগি ও ডিম দিয়ে আমরা ১০/১২ জনে ভাত খাইছি। স্থানীয় আলতাফ সরদার (৫৫) জানান পিকনিক পার্টিতে মফিজ, ইব্রাহিম, জাকির, আসাদুল, ও জয়লাল খা ডেক্সসেট বাজিয়ে পিকনিক খেয়েছে। এদিকে লিটনের মৃত্যুর খবর শুনে গতকাল সোমবার সকালে জয়লান খা ছাগল নিয়ে পালিয়ে বাউফল উপজেলার কালাইয়াতে যেতে দেখেছেন ওই এলাকার ইউনুস সিকদার (৬২)। মাদরাসার সুপার মাওঃ সিহাব উদ্দিন জানান, মাদরাসার জমি ও পুকুরে বিষ প্রয়োগের জন্য লিটনকে সন্দেহ করে ইউএনওকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয় এ বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।

থানা ওসি মো: জসিম জানান, আমার কাছে সিহাব মাওঃ ও ইউএনও স্বাক্ষরিত একটা অভিযোগ আসলে আমি এএসআই মামুনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলি। এএসআই মামুন লিটনকে রোববার বিকালে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে আসে। পরে প্রসাবের কথা বলে থানার পিছনে বিষ খেয়ে ডাক চিৎকার করলে থানায় থাকা লোকজন হসপিটালে নিয়ে যায়। এএসআই মামুনের ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। দশমিনা-গলাচিপা সার্কেল সিনিয়র এএসপি মো: ফারুক জানান, ইউএওর সুপারিশ কর্তৃক অভিযোগের ভিত্তিতে লিটনকে থানায় নিয়ে আসা হয়। লিটন প্রসাবের কথা বলে থানার অভ্যন্তরের টয়লেটে বসে বিষ খেয়ে ডাক চিৎকার এবং টালমাটাল অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনা থানার আনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটেছে। মাদরাসা সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া ফেরদৌস জানান,মাদ্রাসার সুপারের অভিযোগ পেয়ে থানা ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

 

আপনার মতামত লিখুন :