এক বাবার কিছু কথা, চোখে পানি চলে আসবে

প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২১

কথায় আছে আজকের শি’শুই আগামী দিনের পিতা। আজ যে শি’শুর জ’ন্ম হলো সে-ই আগামী দিনে কারো বাবা হবেন। সবার জীবনধারায় শি’শু থেকে বাবা হওয়ার পথ পরিক্রমায় প্রকৃতির নিয়মে বাস্তব অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়ে যায়। আর একটা সময় জীবনের বাস্তবতাগুলো প্রকৃতির নিয়মে প্র’কাশিত হয়ে শি’শু থেকে আজকে যিনি বাবা হলেন তার সামনে এসেও ধ’রা দেয়। বাবা-ছেলের কথোপকথনে এমন বাস্তব কিছু বিষয় উঠেছে।

সত্যি এসব বিষয়গুলো হৃদয়ঙ্গম করলে প্রত্যেকটি ছেলের মন বাবার প্রতি শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় অবনত হয়ে যাবে। পাশাপাশি প্রত্যেক বাবা-ছেলের মাঝে ভালোবাসার একেকটি সেতুব’ন্ধন গড়ে উঠেবে। বাবা-ছেলের কথোকথনে বাস্তব এমন কিছু বিষয় উঠে এসেছে। তাহলে চোখে জল আসার মতো তাদের সেই কথপোকথনের বি’স্তারিত জা’না যাক-

ছেলে: “বাবা তুমি তো বলেছিলে পিতৃ ঋণ কোনদিন শোধ হয় না। তুমি ছাব্বিশ বছরে আমা’র পেছনে যত টাকা খরচ করেছো তুমি কি জানো আমি আগামী তিন বছরে সে টাকা তোমায় ফিরিয়ে দিতে পারবো”। বাবা : ( কিছুটা মুচকি হেসে) “একটা গল্প শুনবি?” ছেলেটা কিছুটা অপ্র’স্তুত হয়ে গেল। নিচু স্বরে বললো- “বলো বাবা শুনবো……”

তোর বয়স যখন চার আমা’র মাসিক আয় তখন দু হাজার টাকা। ওই টাকায় সংসার চালানোর কষ্ট বাড়ির কাউকে কখোনো বুঝতে দেইনি। আমি আমা’র সাধ্যের মধ্যে সব সময় চেষ্টা করেছি তোর ‘মা কে ‘সুখী ক’রতে। তোকে যেবার স্কুলে ভর্তি করলাম সেবার ই প্রথম আম’রা দুজন- আমি-আর তোর মা প’রিকল্পনা করেছি আম’রা তোর পড়ার খরচের বিনিময়ে কি কি ত্যা’গ করবো।

সে বছর তোর মাকে কিছুই দিতে পারিনি আমি। তুই যখন কলেজে উঠলি আমাদের অবস্থা তখন মোটা মুটি ভাল। কিন্তু খুব কষ্ট হয়ে গেছিল যখন তোর মা খুব অসু’স্থ হয়ে প’ড়েছিল। ঔষধ কেনার জন্য রোজ রোজ ওভারটাইম করে বাসে করে পায়ে হেটে ঘামে ভিজে বাড়ি ফিরতে খুব দুর্বিষহ লাগতো। কিন্তু কখনো কাউকে বুঝতে দিইনি এমনকি তোর মাকেও না।

একদিন শো রুম থেকে একটা বাইক দেখে আ’সলাম। সে রাতে আমি স্বপ্নেও দেখেছিলাম আমি বাইকে চড়ে কাজে যাচ্ছি। কিন্তু পরের দিন তুই বায়না ধ’রলি ল্যাপটপ এর জন্য। তোর কষ্টে আমা’র কষ্ট হয় বাবা। আমি তোকে ল্যাপটপ টা কিনে দিয়েছিলাম। আমা’র তখনকার এক টাকা তোর এখন এক পয়সা! কিন্তু মনে করে দেখ এই এক টাকা দিয়ে তুই ব’ন্ধুদের নিয়ে পার্টি করেছিস। ব্র্যান্ড নিউ মোবাইলে হেড ফোন কানে লাগিয়ে সারা রাত গান শুনেছিস। পিকনিক করেছিস, ট্যুর করেছিস, কন্সার্ট দেখেছিস। তোর প্রতিটা দিন ছিল স্বপ্নের মতো।

আর তোর একশ টাকা নিয়ে আমি এখন সুগার মাপাই। জানিস আমা’র মাছ খাওয়া নি’ষেধ, মাংস খাওয়া নি’ষেধ, কি করে এত টাকা খরচ করি বল! তোর টাকা নিয়ে তাই আমি কল্পনার হাট বসাই। সে হাটে আমি বাইক চালিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াই। ব’ন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দে’খতে যাই। তোর মায়ের হাত ধ’রে তাঁত মেলায় ঘুরে বেড়াই।

বাবারা নাকি “খাড়ুশ টাইপের” হয় । আমিও আমা’র বাবাকে তাই ভাবতাম। পুরুষ থেকে পিতা হতে আমা’র কোনো কষ্ট হয়নি, সব কষ্ট তোর মা সহ্য করেছে। কিন্তু বিশ্বা’স কর পিতা থেকে দ্বায়িত্বশীল পিতা হবার কষ্ট একজন পিতাই বোঝে। যুগে যুগে সর্বস্থানে মাতৃবন্দনা হলেও পিতৃবন্দনা কোথাও দেখেছিস?

পিতৃবন্দনা আমি আশাও করি না। সন্তানের প্রতি ভালোবাসা কোনো পিতা হয়তো প্র’কাশ ক’রতে পারে না, তবে কোনো পিতা কখনোই সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্ব পা’লনে বিচ্যুত হয় না। আমি তোর পেছনে আমা’র যে কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করেছি তা হয়তো তুই তিন বছরে শোধ দিতে পারবি… কিন্তু যৌ’বনে দেখা আমা’র স্বপ্ন গুলো ?যে স্বপ্নের কাঠামোতে দাঁড়িয়ে তুই আজ তোর ঋণশোধের কথা বলছিস.সেই স্বপ্নগুলো কি আর কোনোদিন বাস্তব রুপ পাবে ?আর যদি বলিস বাবা আমি তোমা’র টাকা না তোমা’র ভালোবাসা তোমায় ফিরিয়ে দেব, তাহলে বলবো বাবাদের ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে দেয়া যায় না।

তোকে একটা প্রশ্ন করি, ধ’র তুই আমি আর তোর খোকা তিন জন এক নৌকায় বসে আছি। হ’ঠাৎ নৌকাটা ডুবতে শুরু করলো….যে কোনো একজনকে বাঁ’চাতে পারবি তুই।কাকে বাঁ’চাবি ?( ছেলেটা হাজার চেষ্টা করেও এক চুল ঠোঁট নড়াতে পারছেনা! )উত্তর দিতে হবে না। ছেলেরা বাবা হয়, বাবা কখনো ছেলে হতে পারে না।পৃথিবীতে সব চেয়ে ভারী জিনিস কি জানিস?পিতার কাঁধে পুত্রের লা’শ!আমি শুধু আল্লাহর কাছে একটা জিনিস চাই।আমা’র শেষ যাত্রায় যেন আমি আমা’র ছেলের কাঁধে চড়ে যাই। তাহলেই তুই একটা ঋণ শোধ ক’রতে পারবি –তোকে কোলে নেবার ঋণ ।

আপনার মতামত লিখুন :