সংসার টিকিয়ে রাখতে নরসিংদীরতে নবজাতক ছেলে সন্তান চুরি

প্রকাশিত : ১০ মে ২০২১

নরসিংদীর নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা লিপিকা নামের দুই কন্যা সন্তানের জননীর গর্ভে ধারণকৃত এবারের সন্তানটিও কন্যা সন্তান! কিন্তু এবার ছেলে সন্তান না হলে তার এতো দিনের সাজানো সংসার ভেঙে যাবে! উপায়ন্তর না পেয়ে সংসার টিকিয়ে রাখতে অবশেষে ছেলে সন্তানের জন্য চুরির আশ্রয় নেন লিপিকা নামের এক গর্ভবতী নারী। ঘটনাটি ঘটে রবিবার (৯ মে) নরসিংদী সদর হাসপাতালে।

মন্দিরে পরিচিত হওয়া এক মহিলাকে একটি ছেলে বাচ্চার কথা বললে সেই মহিলা কৌশলে গতকাল হাসপাতাল থেকে একটি নবজাতক ছেলেকে চুরি করে ওই গর্ভবতী নারীর কাছে পৌঁছে দেন। বিনিময়ে ২ হাজার টাকা বখশিশ নেন। সোমবার (১০ মে) দুপুরে নরসিংদী মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে সদর হাসপাতাল থেকে দুই দিন বয়সী নবজাতক শিশু চুরির ঘটনায় এমনি লোমহর্ষক তথ্য জানান নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, রবিবার (৯ মে) সকালে সদর হাসপাতালের দোতলায় নানির কোল থেকে ২ দিন বয়সী নবজাতক চুরি হয়। চুরির পরেই হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নবজাতককে উদ্ধারে কাজ শুরু করে পুলিশ।

এরই মধ্যে পুলিশের কাছে খবর আসে এক সিএনজি চালক নরসিংদী সদর হাসপাতালের গেইটের সামনে থেকে এক অজ্ঞাতনামা মহিলাকে ব্রাক্ষন্দি এলাকায় নামিয়ে দিয়ে আসে। এরপর ঐ সিএনজি (অটোরিকশা) চালককে নিয়ে রাত ১ টার দিকে নরসিংদী শহরের মালাকার বাড়ির ঐ মহিলার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে লিপিকা নামে ৯ মাসের অন্তসত্ত্বা এক মহিলার কাছে শিশুটিকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। মহিলার ভাষ্যমতে, তার আগেও দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। এবারের গর্ভের সন্তানটি ও কন্যা সন্তান। কিন্তু এবার কন্যাসন্তান হলে তার সংসার টিকিয়ে রাখা দায়।

তাই সংসার টিকিয়ে রাখতে এবং সমাজের লোক লজ্জার ভয়ে গত কয়েকদিন আগে অজ্ঞাতনামা ঐ মহিলার কাছে একটি পুত্র সন্তানের বিষয়ে আলোচনা করলে ঐ মহিলা তাকে একটি পুত্র সন্তান এনে দেয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন। সবশেষে, রবিবার দুপুরে লিপিকার বাসায় সদর হাসপাতালের চুরি হওয়া ঐ শিশু নিয়ে হাজির হয় অজ্ঞাতনামা ঐ মহিলা। তারপর ২ হাজার টাকা বখশিশের বিনিময়ে বাচ্চাটি লিপিকার হাতে তুলে দিয়ে বাসা থেকে চলে যায় অজ্ঞাতনামা মহিলাটি।

নরসিংদী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, এই উদ্ধারকাজ আমাদের জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ছিলো। যার কাছ থেকে শিশুটি পাওয়া গেছে তিনি প্রায় ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। একদিকে অপরাধ, অন্যদিকে মানবিকতা এই দুই দিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত মহিলাটিকে গ্রেপ্তার করিনি। তবে যিনি চুরি করেছেন তাকে আমরা এখন পর্যন্ত খুঁজে পাইনি। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে, এটার সাথে আরও কোনো চক্রের যোগসাজশ আছে কি না তা ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শাহেদ আহম্মেদ, নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (অপ.) হারুন রশীদ প্রমুখ।

 

আপনার মতামত লিখুন :