সড়কে ভয়ংকর ডাকাত দল, টার্গেট গরু-পেঁয়াজ-মাছ

প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর ২০২১

ছয় থেকে দশ জনের একটি ডাকাত দল রাজধানীসহ সারা দেশের মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে তাদের শিকারে পরিণত হয়েছে অনেকে। তারা ডাকাতির জন্য কিনেছে পিকআপ ভ্যান। এ ডাকাত দলের সবাই পেশায় বাস ও ট্রাক চালক। তাদের মূল টার্গেট মহাসড়কে পিকআপ ভ্যানের কৃষি পণ্য। গরু, পেঁয়াজ, ডাল, ডিম ও মাছ বোঝাই পিকআপ ভ্যানকে টার্গেট করে ডাকাতি করছে তারা। এসব পণ্য এক জেলা থেকে ডাকাতি করে অন্য জেলায় বিক্রি করছে। এ জন্য রয়েছে আরেক সিন্ডিকেট। মাসে অন্তত চার রাতে তারা ডাকাতি করে।

এ ডাকাত দলের অন্যতম হোতা সোহাগ। মাত্র ১২ বছর বয়সে সে চুরি করা শুরু করে। সে সময় গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে চুরি করে সে ধরাও পড়েছিল। পরে জড়িয়ে পরে ডাকাতিতে। দলের আরেক সদস্য মোহসিন, পেশায় বাস ড্রাইভার। সে টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাস চালায়। এর ফাঁকে ফাঁকে ডাকাতি করে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের সময় তারা বেশি ডাকাতি করে।

সম্প্রতি ভয়ংকর এই ডাকাত দলের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ (ডিবি)। শনিবার ডিবি গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. কামরুজ্জামান সরদার দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তারকৃতদের বনানী থানায় রুজুকৃত মামলায় আদালতে প্রেরণ করলে তিন ‍দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মোহাম্মদ আলী সোহাগ, মো. মোহসিন আলী, নূরুন্নবী ওরফে জনি, আমির হামজা আকাশ ও মো. কাজল। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ১টি হলুদ রঙের পিকআপ, দেশীয় অস্ত্র ও ডাকাতির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এই ডাকাত দলটি খুবই ভয়ংকর। তারা ডাকাতির জন্য বের হয়ে মহাসড়কে ডাকাতি করতে না পাড়লে সড়কের পাশের বিভিন্ন দোকানে ডাকাতি করে। এদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় খুন, ডাকাতি, মাদক কারবার ও চুরির মামলা রয়েছে।

এডিসি মো. কামরুজ্জামান সরদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত ১৯ জুলাই (কোরবানির ঈদের আগের দিন) একজন গরু ব্যবসায়ী পিকআপযোগে গরুসহ ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় মগবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে গুরু নিয়ে যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৩ টা থেকে ৪ টার মধ্যে বনানী থানার নিউ এয়ারপোর্ট রোডের চেয়ারম্যান বাড়ি সংলগ্ন মহাখালী ফ্লাইওভারের পাশে পৌঁছালে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা অন্য একটি পিকআপ দিয়ে ভুক্তভোগীর পিকআপটিকে চাপ দেয়। ধারালো চাকু দিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা হুমকি-ধমকি ও ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে পিকআপ থেকে নামিয়ে তাদের পিকআপে উঠিয়ে নেয়। কিছু দূর গিয়ে অজ্ঞাত নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়। পরে গরুসহ গাড়িটি ডাকাত দলের সদস্যরা নিয়ে যায়। এই ঘটনায় ডিএমপির বনানী থানায় একটি মামলা হয়। মামলা হওয়ার পর এর ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।

তিনি আরও বলেন, প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাত দলের সদস্যদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর গত ৯ নভেম্বর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ও গাজীপুর জেলায় পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পিকআপে করে ডাকাতি করা গরু নিয়ে তারা রামপুরা ব্রিজ হয়ে বনশ্রী এলাকার ভেতর দিয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার দিয়ে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ডাকাতরা ঈদের আগের দিন গরু ২টি কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া গরুর হাটে এক লাখ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে এবং বিক্রয়কৃত টাকা ডাকাত দলের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা ঢাকা মহানগর, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ মহাসড়কে রোডে মালবাহী ট্রাক,পিকআপে ডাকাতি করে থাকে। রাতে রাস্তায় চাল, তেল, মুরগি, মাছ, ডাল, ডিম, ডিজেল, পেঁয়াজ ইত্যাদির ট্রাক/ পিকআপ ডাকাতি করে এবং ডাকাতির মালামাল ভৈরব, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করে থাকে। এ ছাড়া ডাকাত দলের সদস্যরা ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলায় রেকি করে। রাত্রে যে গোয়াল ঘরে তালা বা শিকল লাগানো থাকে তা তারা লোহার কাটার দিয়ে কেটে ভেতরে ঢুকে গবাদিপশু নিয়ে অপেক্ষমাণ ট্রাকে তুলে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে নিয়ে চলে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা টিনের ঘেরাও দেয়া বাড়ি বা গোয়াল ঘরের মাটি খুঁড়ে গর্ত করে, প্রথমে একজন প্রবেশ করে। প্রবেশ করার পর দরজা খুলে দিলে তখন অন্যান্য সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করে।

আপনার মতামত লিখুন :