কোয়ারেন্টাইনের নামে নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরে ঝুপড়িঘরে রাখলেন এলাকাবাসী

প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল ২০২০

গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এক নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে একটি নির্জন স্থানে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তার মধ্যে কোয়ারেন্টিনে রেখেছেন এলাকাবাসী। জানা যায়,ঢাকায় হাসপাতালে চাকরি করেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। কিন্তু বাড়ি আসার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে তাকে নির্জন জায়গায় একটি শুকনো পুকুরের মধ্যে তালপাতার ঝুপড়ি তৈরি করে কোয়ারেন্টাইনে রাখেন।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী ওখানে অবস্থান করছেন।ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লখন্ডা গ্রামে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসলে সমালোচনার ঝড় উঠে।জানা গেছে, ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন ওই স্বাস্থ্যকর্মী। করোনা ভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটিতে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈ এর নির্দেশে এলাকাবাসী ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখেন।

ভুক্তভোগী ওই স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিল না। ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। আমার এই মেয়েটার আয়ে সংসার চলে। আমার মেয়েটার এখনো বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায় কে নেবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এলাকাবাসীর সকলের সিদ্ধান্তে ওই নারী স্বাস্থ্য কর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে রাখা হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদেরকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্য কর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারতাম। আমরা এই স্বাস্থ্য কর্মীকে ওখান থেকে এনে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করবো। অপরদিকে, এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা এভাবে ঝুপড়ি ঘরের ভিতর রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :