বেনাপোলের শার্শায় বিদ্যুৎ সংযোগের নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

প্রকাশিত : ২৬ মে ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার: গত ২০শে মে বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডপে সমগ্র দেশের ন্যায় বিধ্বস্থ যশোর জিলা, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষ। প্রচন্ড আকারে বাতাসের গতিবেগ থাকায় ছোট-বড় গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে ঘরবাড়ি এবং বৈদ্যুতিক তারের উপর। ঘরবাড়ি ধ্বংসের পাশাপাশি বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে যশোর জিলায় ১২ জন মানুষের প্রাণহানী ঘটে, এর মধ্যে শার্শা উপজিলাতেই ৪ জন মারা যান। বেনাপোল পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে এ পর্যন্ত সাদিপুর, বড় আঁচড়া, ছোট আঁচড়া, নামাজ গ্রাম, গাজিপুর, ভবারবেড় গ্রামে অবৈধ চাঁদার বিনিময় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।

যশোর জিলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার এবং নতুন-পুরাতন মিলে অনেক বৈদ্যুতিক খুটি নড়বড়ে হয়ে পড়ে, আবার কোথাও কোথাও হেলে পড়ে রাস্তার উপর। পরদিন যথেস্ট পরিশ্রম এবং নিরলস কাজের মাধ্যমে ট্রান্সফরমার সংযোগ এবং বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত পূর্বক শার্শা উপজিলার কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হয় যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীন শার্শা উপজিলা বিদ্যুৎ অফিস। সেটাও আবার ক্ষনিকের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ চলতে থাকে। আজ প্রায় ৭ দিন গত হতে চলেছে শার্শার বিদ্যুৎ অফিস এখনও পর্যন্ত অত্র উপজিলার সর্বত্র পরিপূর্ণ ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পারেনি।

শার্শার বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন,পরিপূর্ণ ভাবে নীরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এদিকে,ট্রান্সফরমার বদল এবং বৈদ্যুতিক লাইন মেরামতে কর্মরত শার্শা বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারী এসব কাজের জন্য প্রতিটি বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অত্র উপজিলার কয়েকটি গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাইন সংযোগের জন্য মিটার প্রতি সর্বনিন্ম ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা, আবার ইজিবাইক ওয়ালারা যে স্থান থেকে চার্জ নিয়ে থাকেন সে সমস্থ জায়গা থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে,যে সমস্থ গ্রাহক আগে টাকা দিবেন শুধুমাত্র তাদেরকেই লাইন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আবার টাকা দিতে অস্বিকার জানালে লাইন সংযোগের ক্ষেত্রে গড়িমসি করে চলেছে।

এ রকম অভিযোগ এনে অত্র উপজিলার বেনাপোল পোর্ট থানাধীন বেনাপোল এর বাসিন্দা ৫নং গেটের সামনে বাড়ি আলামিনের কাছ থেকে ৫০০ টাকা, আশিক রহমানের কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে লাইন সংযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এস কে আমান আইডি থেকে বলা হচ্ছে ছোট আঁচড়া থেকে ২০,০০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে, বোয়ালিয়া বাজারের আজিজুর পিংকু টাকা দিতে অস্বিকার যাওয়ায় তার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছেনা।

আমরা জানি, কোভিড-১৯,মহামারি করোনা ভাইরাসের হাত থেকে দেশ বাসিকে রক্ষা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৬শে মার্চ থেকে/২০২০ থেকে ৩০শে মে/২০২০ ইং পর্যন্ত লকডাউন কর্মসুচি অব্যাহত রেখেছেন, যার কারনে প্রায় দুই মাসের অধীক দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ কর্মহীন হয়ে ঘরবন্দি হয়ে আছেন। কাজের অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ এবং দিন আনা দিন খায় এমন মানুষগুলো বিপদগ্রস্থ হয়ে অসহায়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিভিন্ন ভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরন করছেন। সরকারের পাশাপাশি অসহায় এবং দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য- সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করছেন, সমাজের বিত্তবান, ব্যাক্তি বিশেষ, রাজনৈতিকদল এবং ছোট-বড় সামাজিক সংগঠনগুলো।

দেশের এই ক্রান্তি সময়ে সরকার যেখানে জীবণ-জীবিকা,জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি নাগরিকের দায়ভার গ্রহন করেছেন, সেখানে কি করে এবং কার ঘোষনার মাধ্যমে শার্শার বিদ্যুৎ অফিস তথা যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ মিটার না দেখে অফিসে বসে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল তৈরী করে তাদের লোক মারফত গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি পৌছে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে লকডাউন মুহুর্তে যেখানে একটি লোকও বাড়ীর বাহির হতে পারছে না, সেখানে শার্শা’র বিদ্যুৎ অফিস বিনা স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরন বিহীন লোকদ্বারা কিভাবে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল ঘরে ঘরে পৌছে দিল।

আবার সুরক্ষা উপকরন ছাড়া যে লোকটি বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ বিল পৌছে দিল, তার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ায়নি এর গ্যারান্টি কে বহন করবে? আবার বিদ্যুৎ বিলের উপর যে সীলটি মারা হচ্ছে তাতে দেশের ক্রান্তির কারন করোনা ভাইরাসের কথা উল্লেখ না করে, লেখা হয়েছে “গ্রাহকদের অসুবিধার কারনে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং অফিস থেকে যে বিল সরবরাহ করা হলো গড়মিল দেখা দিলে সংশোধন করা হবে”।

গ্রাহকরা প্রশ্ন তুলেছেন, কার নির্দেশে লকডাউন মুহুর্তে গোপনে বাড়ী বাড়ী লোক পাঠানো হলো? যেখানে লোক মারফত বাড়ী বাড়ী বিদ্যুৎ বিল পৌছে দেওয়া হলো অথচ অফিসে বসে মিটার না দেখে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল তৈরী করার উদ্দেশ্যটি কি? মনগড়া বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে গত ২৪ শে মে ঢাকার কয়েকজন ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ গ্রাহকের কথা তুলে ধরে আরটিভি’র একটি নিউজ আপডেট প্রচারিত হয়, এ ছাড়াও কালের কন্ঠ, অনলাইন বিডি নিউজ২৪ এ শার্শা বিদ্যুৎ অফিসের মনগড়া বিলের ব্যাপারে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে।

সেখানে ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাদের মিটার রিডিং না দেখে গত বছরের বিলের দেড় থেকে দ্বিগুন বেশী করে বিল তৈরী করে করোনা সংক্রমনের মধ্যেও যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর লোকজন শার্শা উপজিলার গ্রাহকদের বাড়ী বাড়ী যেয়ে বিদ্যুৎ বিলের কপি দিয়ে যাচ্ছেন। বিলের জরিমানা নেওয়া হবে না বলা হলেও ব্যাংকে জরিমানা নেওয়া হচ্ছে। গ্রাহকরা বলছেন, করোনা ভাইরাস কে উপেক্ষা করে সরকারের নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশের মানুষের উপর শোষক হিসেবে ইংরেজদের মত নীল চাষে নেমেছেন?

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ শার্শা জোনাল অফিসের ডিজিএম বলেন, এ অবৈধ টাকার ব্যাপারে অভিযোগ ভিত্তিহীন। কেউ যদি প্রমান করতে পারে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

 

আপনার মতামত লিখুন :